বান্দরবানের প্রবীণরা পেলেন সেবা ও সম্মানের স্পর্শ

বান্দরবানে ৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উদযাপন: প্রবীণদের সম্মাননা, স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতার দিনব্যাপী কর্মসূচি।
অসীম রায় (অশ্বিনী), বান্দরবান: “একদিন তুমি পৃথিবী গড়েছো, আজ আমি স্বপ্ন গড়বো / সযত্নে তোমায় রাখবো আগলে”—এই হৃদয়স্পর্শী প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বান্দরবান জেলায় উদযাপিত হলো আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের ৩৫তম বার্ষিকী।
যদিও বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয় ১ অক্টোবর, বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় কর্মসূচিগুলো সম্পন্ন হয় ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার।
দিনব্যাপী এ আয়োজনে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা, যত্ন ও স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। সমাজে প্রবীণবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে র্যালি, হেলথ ক্যাম্প ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
র্যালিতে প্রবীণদের অংশগ্রহণ
দিনের শুরুতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি জাঁকজমকপূর্ণ র্যালি বের হয়। হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে শতাধিক প্রবীণ নাগরিক অংশ নেন এতে। র্যালির মাধ্যমে প্রবীণদের অধিকার, যত্ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং সমাজে তাঁদের অবদানের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
হেলথ ক্যাম্পে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা
র্যালি শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিশেষ হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়, যার উদ্বোধন করেন বান্দরবান জেলার জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আরা রিনি। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন,
“প্রবীণরা আমাদের সমাজের জ্ঞানভান্ডার। তাঁদের যত্ন নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই ক্যাম্পের মাধ্যমে তাঁদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান আমাদের মানবিক দায়িত্বেরই অংশ।”
ক্যাম্পে শতাধিক প্রবীণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়। ডা. ওয়াহিদ হাসান (জুনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন) ও ডা. সুজন কুমার ধর (জুনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি) চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এতে রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অনুদান প্রদান
দিনের শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, যার সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু তালেব। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, তিনি জানান,
“প্রবীণদের জন্য বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর পাড়ে ও কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ওয়াকওয়ে ও চেয়ার স্থাপনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।”
সভায় প্রবীণদের অনুদান বিতরণ করা হয় এবং ফ্রি চিকিৎসা সেবার প্রসার ঘটানো হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিল্টন মহুরি, সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সত্যজিৎ মজুমদার, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি অংচ মং মারমা, সাধারণ সম্পাদক সুগত বড়ুয়া, এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রবীণবান্ধব সমাজের প্রত্যাশা
সভায় বক্তারা বলেন, প্রবীণরা সমাজের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও মূল্যবোধের ধারক। তাঁদের যত্ন নেওয়া মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব। সরকারের প্রবীণ ভাতা, হেলথ কার্ড ও প্রবীণ সেবা কেন্দ্রের মতো কর্মসূচি সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তবে পরিবারের সদস্যদের সচেতন অংশগ্রহণও জরুরি।
আশা ও প্রতিশ্রুতির বার্তা
দিবসটির কর্মসূচি প্রবীণদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। জেলা প্রশাসকের ঘোষণা অনুযায়ী আসন্ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে প্রবীণরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারবেন।
এই আয়োজন শুধু একটি দিবস উদযাপন নয়—এটি প্রবীণদের প্রতি দায়বদ্ধতা, ভালোবাসা ও সম্মানের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা বান্দরবান সমাজে মানবিকতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।







