উৎসবের রাতে মৃত্যু: মিয়ানমারে জান্তার বোমা হামলায় ৪০ প্রাণ গেলো

মিয়ানমারে সামরিক হামলায় ৪০ জন নিহত: উৎসবের রাতে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি, শিশুসহ বহু নিহত।
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক: মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের চাউং ইউ টাউনশিপে এক ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব এবং জান্তা-বিরোধী প্রতিবাদের সময় সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত এবং ৮০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ‘থ্যাডিঙ্গ্যুত পূর্ণিমা’ বা ‘লাইটিং ফেস্টিভ্যাল’-এর সময় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
উৎসবের মাঝেই মৃত্যু নেমে আসে
থ্যাডিঙ্গ্যুত পূর্ণিমা মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি জনপ্রিয় আলোক উৎসব, যা সাধারণত প্রদীপ জ্বালিয়ে উদযাপন করা হয়। এইবার উৎসবটি রূপ নেয় জান্তা-বিরোধী এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে, যেখানে শত শত মানুষ ক্যান্ডেল লাইট ভিজিলে অংশ নিচ্ছিলেন।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি মোটরচালিত প্যারামোটর (Powered Paraglider) ভিড়ের উপর দিয়ে উড়ে এসে ধারাবাহিকভাবে তিনটি বোমা ফেলে। প্রথম বিস্ফোরণেই বেশিরভাগ মানুষ হতাহত হন। সাক্ষীদের ভাষায়, “লোকজন দৌড়াতে শুরু করলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বোমাগুলো পড়ে — চারদিকে শুধু আগুন আর মানুষের চিৎকার।”
শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
সাক্ষীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে বহু শিশুর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “আমরা উৎসবে মোমবাতি জ্বালাচ্ছিলাম। হঠাৎ আকাশ থেকে বোমা পড়ল। আমার পাশে থাকা দুই বন্ধু সেখানেই মারা যায়। মঙ্গলবার আমি নয়জন বন্ধুর দাফনে ছিলাম।”
উৎসব আয়োজক কমিটির এক সদস্য জানান, “বোমাগুলো ৪০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, প্রায় ৮০ জন আহত। পরের সকালে আমরা মাটির নিচ থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তুলেছি — এটি বর্ণনাতীত দৃশ্য।”
নিহত ও আহতের হিসাব
নিহত: কমপক্ষে ৪০ জন (নারী ও শিশুসহ)
আহত: প্রায় ৮০ জন
অবস্থা: বহুজন গুরুতর আহত, স্থানীয় ক্লিনিকে সীমিত চিকিৎসা চলছে।
স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যম ৪০ জন নিহতের খবর নিশ্চিত করেছে, তবে কিছু সূত্র ৩২ জন নিহতের কথা বলছে, যার মধ্যে ৫ জন ছিলেন জান্তা-বিরোধী প্রতিরোধ যোদ্ধা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই হামলাকে “গ্রুসাম ওয়েক-আপ কল” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি মিয়ানমারের জনগণের জন্য নতুন করে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার দাবি উত্থাপন করছে।
সংস্থার গবেষক জো ফ্রিম্যান বলেন, “সামরিক বাহিনী এখন প্রতিরোধের কেন্দ্রগুলোতে আরও হিংস্র কৌশল ব্যবহার করছে। এএসইএএন দেশগুলোকে অবিলম্বে জান্তার উপর চাপ বাড়াতে হবে।”
চলমান গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার কার্যত এক গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। নির্বাচিত সরকার উৎখাতের পর সামরিক জান্তা সারাদেশে দমননীতি চালু করে, যার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
জান্তা ডিসেম্বর ২৮-এ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে, যা জাতিসংঘ “প্রতারণা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিদ্রোহীরা এই নির্বাচন ঠেকানোর অঙ্গীকার করেছে।
চাউং ইউ টাউনশিপের এই হামলা মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। উৎসবের আলো নিভে গেছে বোমার অগ্নিগোলায়, আর দেশের সাধারণ মানুষ এখনো ভয়ে দিন কাটাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা জান্তা বাহিনীর নৃশংসতাকে উৎসাহ দিচ্ছে—এমনটাই মনে করছে স্থানীয় অধিকারকর্মীরা।







