ইসরায়েলি অভিযানের জবাবে পাল্টা হামলায় প্যালেস্টাইনি যোদ্ধারা

গাজায় নতুন সংঘর্ষ: ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর গোলাবর্ষণের দাবি প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদের।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা স্ট্রিপের উত্তর-পশ্চিমে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরের কাছে ইসরায়েলি সৈন্য ও সামরিক যানবাহনের ওপর গোলাবর্ষণ করেছে প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) সশস্ত্র শাখা আল-কুদস ব্রিগেডস, এমন দাবি করেছে সংগঠনটি।
আল-কুদস ব্রিগেডসের বিবৃতি অনুযায়ী, তাদের যোদ্ধারা মর্টার গোলা ও বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান ও যানবাহনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে আক্রমণ চালায়। সংগঠনটির দাবি, এতে ইসরায়েলি বাহিনী “উল্লেখযোগ্য ক্ষতির” মুখে পড়ে। যদিও হতাহতের কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।
গাজা সিটির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে এই হামলাটি ঘটে, যেখানে বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী ‘অপারেশন গিডিয়নস চ্যারিয়টস’ নামে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করছে। এ অভিযানে হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীর ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করা হচ্ছে। গাজার প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোও পাল্টা প্রতিরোধে অ্যাম্বুশ, বিস্ফোরক স্থাপন এবং গোলাবর্ষণের মতো কৌশল অব্যাহত রেখেছে।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আল-নাসর এলাকায় এক অভিযানে আল-কুদস ব্রিগেডস দাবি করে, তারা ইসরায়েলি ইঞ্জিনিয়ার ইউনিটের ওপর অ্যাম্বুশ চালিয়ে একাধিক সৈন্যকে হতাহত করে। একই সময়ে আল-কুদস হাসপাতাল ও আল-সাবরা এলাকায়ও অ্যান্টি-আর্মার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো এই নির্দিষ্ট হামলা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে তারা জানিয়েছে, গাজায় “সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযান” অব্যাহত রয়েছে এবং শহরের উত্তর অংশে তাদের অবস্থান আরও জোরদার করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষেও ১,৫০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন—যার অধিকাংশই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস আক্রমণে প্রাণ হারান।
আল জাজিরার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনার পর গাজায় আরও কয়েক দফা ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়, যাতে বেসামরিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হামাস ও পিআইজে এসব হামলাকে “গণহত্যা” বলে আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের অভাবে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি আলোচনাও এখনো ফলপ্রসূ হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আক্রমণ গাজা যুদ্ধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা উভয় পক্ষের জন্যই রক্তক্ষয়ী ও ধ্বংসাত্মক। আন্তর্জাতিক চাপ এবং মানবিক বিপর্যয় সত্ত্বেও সংঘাতের অবসান এখনো দূরের স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে।






