চীন থেকে ২০টি J‑10CE যুদ্ধবিমান ক্রয়: বাংলাদেশের নতুন অধ্যায়

চীন থেকে ২০টি J‑10CE যুদ্ধবিমান ক্রয়: বাংলাদেশের নতুন অধ্যায়।
টুইট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকার জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালীকরণ এবং বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণের উদ্যোগ হিসেবে চীন থেকে ২০টি J‑10CE মাল্টি‑রোল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ৪.৫ প্রজন্মের অত্যাধুনিক বিমানগুলো ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে (BAF) যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্রয়, প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খরচসহ চুক্তির মোট মূল্য ধরা হয়েছে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার, যা প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা। এটি দুই অর্থবছরে (২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭) বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সরকার-টু-সরকার (G2G) চুক্তির মাধ্যমে চীনের সঙ্গে সম্পাদিত হতে পারে। বিমানের মূল্য ১০ বছরের কিস্তিতে ২০৩৫-২০৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহর দীর্ঘদিন ধরে পুরনো হওয়ায় এবং আধুনিক যুদ্ধক্ষমতার অভাব থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো, যেমন ২০২৪ সালের মে মাসে Yak-130 প্রশিক্ষণ বিমানের ক্র্যাশ এবং ২০২৫ সালের জুলাই মাসে স্কুল এলাকার কাছে দুর্ঘটনা, আধুনিক বিমান ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা আরও দৃঢ় করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে জে-১০সিই-এর কার্যকারিতা (পাকিস্তানি দাবি অনুযায়ী রাফাল বিমান ধ্বংসের ঘটনা) বাংলাদেশের পছন্দে প্রভাব ফেলেছে।
চীনের সঙ্গে এই ক্রয় আলোচনার প্রাথমিক সূচনা হয় ২০২৫ সালের মার্চে, যখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেন। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে বিমানবাহিনীর প্রধান শেখ আব্দুল হান্নান চীনে যান এবং জে-১০সিই ক্রয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ১৬টি বিমান ক্রয়ের পরিকল্পনা ছিল। পরে, ২০২৫ সালের আগস্টে ১২টি বিমান ক্রয় প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকলেও অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী চূড়ান্ত চুক্তি ২০টি বিমানে পরিণত হয়েছে। এই চুক্তি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা যুদ্ধবিমানের অপারেটর দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে স্থান দেবে।
জে-১০সিই যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য
চেংডু এয়ারোস্পেস কর্পোরেশন (CAC) নির্মিত জে-১০সিই একটি সিঙ্গেল-ইঞ্জিন মাল্টি-রোল ফাইটার। মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
রাডার ও সেন্সর: AESA রাডার, ২০০ কিমি পর্যন্ত লক্ষ্য শনাক্ত সক্ষমতা।
অস্ত্র: PL-15E লং-রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল, LDR-10 এনার্জি ওয়েপনস, বিভিন্ন গাইডেড বোম।
পারফরম্যান্স: সুপারক্রুজ সক্ষমতা, উচ্চ ম্যানুভারেবিলিটি, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম।
ইঞ্জিন: WS-10B টার্বোফ্যান, ১.৮ ম্যাক গতিতে উড়তে সক্ষম।
অপারেশনাল রেকর্ড: পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ২০২২ সাল থেকে ব্যবহার করছে, ২০২৫ সালের সংঘাতে দক্ষতা প্রমাণিত।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বর্তমান বহর
BAF-এর মোট ২১২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট। প্রধান ফাইটারগুলোর মধ্যে চীনা F-7 এবং রাশিয়ান MiG-29 রয়েছে। Yak-130 প্রশিক্ষণ ও সীমিত আক্রমণাত্মক সক্ষমতার জন্য ব্যবহৃত হয়। লজিস্টিকস এবং প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে J‑10CE ফ্লিটটি বর্তমান F-7-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- কৌশলগত গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ
২০টি J‑10CE বাংলাদেশের আকাশ ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে। এটি ভারতের রাফালের মোকাবিলায় একটি সমতার সরঞ্জাম হিসেবে কাজ করবে এবং চীন-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও গভীর করবে।
তবে বাজেট সীমাবদ্ধতা, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং সমন্বিত এয়ারডিফেন্স সিস্টেম গড়ার প্রয়োজনীয়তা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে।






