গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬৭ হাজার ছাড়াল

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭,১৩৯-এ পৌঁছাল: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ রিপোর্ট।
বিশ্ব ডেস্ক: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের গভীরতা আরও বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, চলমান ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযানে মোট নিহতের সংখ্যা ৬৭,১৩৯ জনে পৌঁছেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৫ জনের মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনের দেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬৯,৫৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও লাশ, উদ্ধারকাজ ব্যাহত
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এই পরিসংখ্যান কেবলমাত্র হাসপাতালগুলোতে পৌঁছানো মৃতদেহের উপর ভিত্তি করে তৈরি। বাস্তবে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে, কারণ অসংখ্য মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় পড়ে আছে। ক্রমাগত বোমাবর্ষণের কারণে অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা উদ্ধারকাজে যেতে পারছেন না।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা অফিস (OCHA) জানিয়েছে, গাজার ৭০ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র আংশিক বা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। ওষুধ, জ্বালানি, ও খাবারের সংকটে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
শিশু ও নারী নিহতের হার উদ্বেগজনক
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ২৮,০০০-এর বেশি শিশু ও ১৭,০০০-এর বেশি নারী। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, “এটি আধুনিক ইতিহাসে শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটি।”
চলমান হামলা ও অবরোধ পরিস্থিতি
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের পর থেকে গাজা উপত্যকা পূর্ণ অবরোধের মধ্যে রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করে যে তারা হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক ধ্বংসের লক্ষ্যে নতুন আক্রমণ শুরু করেছে। অপরদিকে হামাস জানায়, তারা “ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায়” দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলে কয়েকটি রকেট হামলা চালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল এবং বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহল গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পুনরায় বলেছেন, “এটি শুধু একটি সংঘাত নয়, এটি মানবিক নৃশংসতার সীমা অতিক্রম করেছে।”
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক করিডর চালুর পক্ষে মত দিলেও ইসরায়েলি সরকার এখনো “নিরাপত্তা হুমকি না কমা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখবে” বলে জানিয়েছে।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা
গাজা সিটির বড় অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। জাতিসংঘের উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, উপত্যকার প্রায় ৬০ শতাংশ ভবন আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। হাজার হাজার পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
গাজা সিটির এক বাসিন্দা নাজিয়া হামিদ আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা ঘর হারিয়েছি, আত্মীয় হারিয়েছি, এখন শুধু বেঁচে থাকার লড়াই চলছে।”
গাজার মানবিক বিপর্যয় এখন চরমে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই সংঘাতে মৃত ও আহতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানালেও, বাস্তবে গাজা এখনো রক্তে ভেজা যুদ্ধক্ষেত্র।







