লিউইয়াং-এ ড্রোন আতশবাজি শো-তে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা

ছোট শিরোনাম: লিউইয়াং-এ ড্রোন আতশবাজি শো-তে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা, আকাশ থেকে স্ফুলিঙ্গের বৃষ্টি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের আতশবাজির রাজধানী লিউইয়াং-এ অনুষ্ঠিত এক ড্রোন-আতশবাজি শো-তে ঘটে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আকাশে ঝলমলে আলো আর আতশবাজির আকৃতি তৈরির মাঝেই হঠাৎ ড্রোনের ত্রুটি বা নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতার কারণে বিশাল স্ফুলিঙ্গ ও জ্বলন্ত কণা বৃষ্টির মতো ছিটকে পড়ে দর্শকদের দিকে।

মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, দর্শকরা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে সরে যান, মাটিতে কয়েক জায়গায় আগুন ধরে যায়। সৌভাগ্যবশত, স্থানীয় কর্মীদের দ্রুত পদক্ষেপে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শত শত ড্রোন আকাশে চীনা লোককাহিনীর দৃশ্য ও প্রতীক তৈরি করছে, যেমন ‘স্কাই গেট’ বা ‘টিয়ার্স ফ্রম দ্য ডোর অব হেভেন’। ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘটে বিভ্রাট। আতশবাজির অতিরিক্ত চাপ, ড্রোনের কারিগরি ত্রুটি বা প্রবল বাতাসের প্রভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে কিছু ড্রোন। এর ফলেই আতশবাজির স্ফুলিঙ্গ নেমে আসে দর্শকদের মাথার ওপর। পুরো পরিবেশ এক মুহূর্তে আতঙ্কে ভরে ওঠে।

ঘটনার ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিডিওটি লক্ষাধিক ভিউ পায়। জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট @MyLordBebo ঘটনাটিকে “ভয়াবহ” বলে উল্লেখ করেছেন, অন্যদিকে @mog_russEN বলেছেন, “এটি যেন স্ফুলিঙ্গের বৃষ্টি দর্শকদের উপর নেমে এসেছে।” কেউ কেউ রসিকতা করে মন্তব্য করেছেন, “এলিয়েন আক্রমণ!” আবার অনেকে লিখেছেন, “চীন ২০৩৫ সালে বাস করছে, আমরা এখনো ২০২০-এ আটকে আছি।” রেডিটের r/Damnthatsinteresting গ্রুপেও এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

হুনান প্রদেশের লিউইয়াং দীর্ঘদিন ধরেই ‘বিশ্বের আতশবাজির রাজধানী’ নামে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশ দূষণ ও নিরাপত্তা নীতির কারণে ঐতিহ্যবাহী আতশবাজির ব্যবহার কমে গেছে। এ অবস্থায়, আধুনিক ড্রোন প্রযুক্তির সঙ্গে আতশবাজির সমন্বয় ঘটিয়ে নতুন ধরণের শো আয়োজন শুরু হয়। ২০২৩ সাল থেকে লিউইয়াং-এ এমন প্রায় ১০০টি শো আয়োজিত হয়েছে, যা কোটি কোটি দর্শক আকর্ষণ করেছে এবং বিলিয়ন ডলারের পর্যটন আয় এনেছে। তবে ৩ অক্টোবরের দুর্ঘটনা প্রমাণ করেছে, ড্রোন এবং বিস্ফোরক একত্রে ব্যবহারে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়ে গেছে।

এই ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোন-আতশবাজি শোতে নিরাপত্তা প্রোটোকল আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রতিটি ড্রোনের প্রযুক্তিগত পরীক্ষা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী পরিচালনা এবং দর্শক সুরক্ষায় বিশেষ সেফটি জোন নিশ্চিত করা জরুরি।

লিউইয়াং-এর এই ঘটনা প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের মিশ্রণের এক অসাধারণ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ উদাহরণ। যদিও দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার কারণে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই দুর্ঘটনা ড্রোন-আতশবাজি শো-এর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। দর্শকদের কাছে এটি একই সঙ্গে রোমাঞ্চকর এবং ভীতিকর অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।