প্রতীকী মানবিক মিশনকে ‘হামাস-সমর্থিত’ বলছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি আইন অনুযায়ী আটক বিদেশিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহ্বান। ইতিমধ্যে চার ইতালীয় দেশে ফিরে গেছেন।

টুইট প্রতিবেদন: গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ভেসে চলা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লটিলা’র ৪২টি জাহাজ আন্তর্জাতিক জলে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ প্রায় ৪৫০ জনেরও বেশি বিদেশি অ্যাকটিভিস্ট, সাংসদ ও সেলিব্রিটি গ্রেপ্তার পড়েছেন।

ইসরায়েল এই অভিযানকে ‘হামাস-সমর্থিত প্ররোচনামূলক কর্মসূচি’ বলে আখ্যা দিয়েছে, তবে এ ঘটনায় ইউরোপ, তুরস্ক ও লাতিন আমেরিকায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

ফ্লটিলার উদ্দেশ্য ও যাত্রা: প্রতীকী মানবিক মিশন

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লটিলা ছিল গাজার দীর্ঘ ১৮ বছরের নৌ-অবরোধ ভাঙার সবচেয়ে বড় প্রতীকী উদ্যোগ। ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা বন্দর থেকে যাত্রা করা এই বহরে ৪৪টি দেশ থেকে আসা প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইউরোপীয় সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের সাংসদ, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং বিশিষ্ট পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা ছিলেন।

জাহাজগুলোতে ছিল সীমিত পরিমাণ খাদ্য, পানি, ওষুধ ও মানবিক সহায়তা, যার উদ্দেশ্য ছিল গাজার অবরুদ্ধ জনগণের দুর্দশা তুলে ধরা। পথে জাহাজগুলো ইতালি, গ্রিস ও তিউনিসিয়ায় থামে, তবে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা ও কারিগরি সমস্যায় বারবার বিলম্ব হয়।

আটক অভিযান: আন্তর্জাতিক জলে ইসরায়েলি আক্রমণ

১ অক্টোবর রাতে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ৭০–৮০ নটিক্যাল মাইল দূরে ইসরায়েলি নৌবাহিনী অভিযান শুরু করে। এলিট কমান্ডো ইউনিট শায়েতেত ১৩ জাহাজে উঠে অ্যাকটিভিস্টদের আটক করে।

ফ্লটিলা সংগঠকদের দাবি, ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোরিডা নামক জাহাজে ধাক্কা দেয়, ইউলারা ও মেটেক জাহাজে ওয়াটার ক্যানন ব্যবহার করে। শেষ জাহাজ ম্যারিনেট আটক হয় ২ অক্টোবর, এতে ছয়জন ছিলেন। ফ্রান্সের পতাকাবাহী মিকেনো নামের একটি জাহাজ গাজার জলে প্রবেশ করে যোগাযোগ হারায়, যেটিকে সংগঠকরা আংশিক সাফল্য বলে ঘোষণা করেছে। তবে ইসরায়েল বলছে, কোনও জাহাজই অবরোধ ভাঙতে সক্ষম হয়নি।

প্রখ্যাত অংশগ্রহণকারী: থুনবার্গসহ বিশ্বব্যাপী মুখ

গ্রেটা থুনবার্গ দ্বিতীয়বার ফ্লটিলা অভিযানে অংশ নেন। তিনি আলমা জাহাজে থেকে বলেন, “আমরা গাজায় যাচ্ছি মানবিক সাহায্য নিয়ে, এটি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।”
অন্যদের মধ্যে ছিলেন স্পেনের সাবেক বার্সেলোনা মেয়র আদা কোলাউ, ইউরোপীয় সংসদ সদস্য রিমা হাসান (ফ্রান্স), দক্ষিণ আফ্রিকার এমপি মান্ডলা মান্ডেলা, ব্রাজিলের সামাজিক আন্দোলনকর্মী থিয়াগো অ্যাভিলা প্রমুখ।

প্রত্যাহ্বান প্রক্রিয়া: দ্রুত সমাধানের চেষ্টা

ইসরায়েলি আইনে আটক বিদেশিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহ্বান করা যায়। ইতিমধ্যে চারজন ইতালীয় নাগরিক দেশে ফিরেছেন। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনিও তাজানি জানিয়েছেন, “কোনও সহিংসতা ছাড়াই প্রত্যাহ্বান হচ্ছে।” ফ্রান্স, পোল্যান্ডসহ ইউরোপীয় দেশগুলো নিজ নিজ নাগরিকদের ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে কিছু অংশগ্রহণকারী অনশন শুরু করেছেন, দাবি করছেন, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পরিচালিত আক্রমণ।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নিন্দা ও বিক্ষোভ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ঘটনাটিকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ বলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বহু দেশ অ্যাকটিভিস্টদের মুক্তি দাবি করেছে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেছেন।

বার্সেলোনা, রোম, বার্লিন, ব্রাসেলস, আঙ্কারা ও করাচিসহ নানা শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। ইতালিতে বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে ‘অবৈধ আক্রমণ’ বলছে।

গাজার প্রেক্ষাপট: অবরোধ ও মানবিক সংকট

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে বহু হতাহত হয়েছে। অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধের অভাব চরমে পৌঁছেছে। ফ্লটিলা এই সংকটের প্রতীক হয়ে উঠলেও ইসরায়েল বলছে, প্রকৃত সাহায্য স্থলপথেই পৌঁছে দেওয়া উচিত।

সংগঠকরা বলছেন, “তোমরা মানুষ আটক করতে পারো, কিন্তু সত্যকে আটকাতে পারবে না।”