ভারতের লাদাখে ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার: স্ত্রী’র দাবি সরকারের হয়রানি

লাদাখে সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার: স্ত্রী’র অভিযোগ অস্বীকার, সরকারের ‘হয়রানি’ অভিযোগে রাজনৈতিক উত্তেজনা
বিশ্ব ডেস্ক: লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে অনশনরত পরিবেশবাদী সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুককে লাদাখ পুলিশ এনএসএ-এর অধীনে গ্রেপ্তার করেছে। তার স্ত্রী গীতাঞ্জলি জে আংমো সরকারকে ‘হয়রানি’ করার অভিযোগ তুলেছেন এবং স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠানো সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গীতাঞ্জলি বলেন, গ্রেপ্তারের পরও ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় পার হয়েছে, কিন্তু তাদের কোনো সরকারি তথ্য বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
সোনম ওয়াংচুক ৫৯ বছর বয়সী পরিবেশবাদী ও সমাজকর্মী, লেহ অ্যাপেক্স বডি (LAB) ও কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (KDA)-এর নেতৃত্বে লাদাখকে রাজ্য মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে আনার দাবিতে ৩৫ দিনের অনশন শুরু করেন। অনশন চলাকালীন ২৪ সেপ্টেম্বর লেহে বিক্ষোভে সহিংসতা ঘটে, যেখানে ৪ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১৪০ জন আহত হন। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ ও গুলি ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
২৬ সেপ্টেম্বর লাদাখ পুলিশ তাকে লেহ থেকে ৬০ কিমি দূরের উলেটোকপো গ্রামে গ্রেপ্তার করে। সরকারের অভিযোগ, ওয়াংচুক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া বিদেশি তহবিলের অপব্যবহারেরও অভিযোগ ওঠে।
গীতাঞ্জলির প্রতিক্রিয়া
এনডিটিভি সাক্ষাৎকারে গীতাঞ্জলি বলেন, “চার বছর ধরে স্বামীর বিরুদ্ধে হয়রানি শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তারের পরও কোনো অফিসার থেকে তথ্য পাইনি। সোনম শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। সহিংসতা তার ইচ্ছার বাইরে ঘটেছে।” তিনি পাকিস্তানি যোগসূত্রের অভিযোগকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, ওয়াংচুক মূলত জলবায়ু পরিবর্তন ও সমাজকল্যাণের কাজে যুক্ত ছিলেন।
লাদাখে প্রতিক্রিয়া
লাদাখ বৌদ্ধ অ্যাসোসিয়েশন, লেহ অ্যাপেক্স বডি ও KDA গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করেছে। লেহে কারফিউ এবং কার্গিলে ১৬৩ ধারা জারি রয়েছে। লাদাখ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, গ্রেপ্তার জনসাধারণের শান্তি রক্ষার জন্য এবং ওয়াংচুকের বক্তব্য সহিংসতার জন্য দায়ী।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, “সোনম ওয়াংচুকের গ্রেপ্তার অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী।” জম্মু ও কাশ্মীরের নেতা ওমর আবদুল্লাহও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীর গ্রেপ্তারকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। লাদাখের এমপি হাজি হানিফা অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করা উচিত নয়।
সোনম ওয়াংচুকের গ্রেপ্তার লাদাখে রাজনৈতিক আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। গীতাঞ্জলির সাক্ষাৎকারে সরকারের ‘হয়রানি’ এবং চার বছর ধরে চলা চাপের তথ্য উঠে এসেছে। লাদাখবাসীর অসন্তোষ ও কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদ এই ঘটনায় স্পষ্ট।
কারফিউ, ইন্টারনেট সাসপেনশন ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। লাদাখের অধিকার আন্দোলন জাতীয় মঞ্চে এসেছে।






