ঢাকায় ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতি ফাঁস: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
ঢাকায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার: ঝটিকা মিছিলের অভিযোগে ডিবির অভিযান, কয়েকজনের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা—আইনানুগ ব্যবস্থা চলছে।
টুইট ডেস্ক: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এই গ্রেপ্তারগুলো মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত) হয়েছে।
ডিবি জানায়, নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন। এছাড়া, কয়েকজনের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা রয়েছে।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন এ এফ রহমান হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি; এ এস এম আল সনেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক; কাজী আইনুল আসিফ, খিলক্ষেত থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি; মোহাম্মদ নিছার আলী, ঝিকরগাছার ১১ নম্বর বাঁকড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক; আমিনুল হক ফয়সাল, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক; মুরসালিন তালুকদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক; মুহম্মদ আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য; মাহবুবুল ইসলাম, বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য; নুসরাত জাহান, আমতলী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী; বেলাল হোসেন, লালবাগ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি; আরশেদ আলী বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি; অভিমুন্য বিশ্বাস অভি, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং মো. আকাশ, ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। গ্রেপ্তারকৃতদের বয়স ২৫ থেকে ৫৭ বছরের মধ্যে, এবং কয়েকজনের বিরুদ্ধে পূর্বে মামলা রয়েছে।
এই অভিযান সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত বাড্ডা, মতিঝিল, বনশ্রী, রমনা, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, মুগদা ও রামপুরা এলাকায় পরিচালিত হয়। ডিবি কর্মকর্তারা জানান, অভিযানটি ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা রোধ এবং নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা কমানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তেজগাঁও ও পান্থপথ এলাকায় মিছিল চলাকালীন ককটেলসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “এই নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল। আমরা রাজধানীতে শান্তি বজায় রাখতে অবিরাম অভিযান চালাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের পতনের পর (অগাস্ট ২০২৪) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনছে। ছাত্রলীগকে অক্টোবর ২০২৪-এ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রলীগ কোটা সংস্কার আন্দোলন ও অন্যান্য বিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছিল। এর আগে এপ্রিল ২০২৫-এ ৫৬ জন, ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ চট্টগ্রামে ৪২ জন এবং নভেম্বর ২০২৪-এ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে সেপ্টেম্বর ১৮-এ টাঙ্গাইলে ২ জন এবং সেপ্টেম্বর ৭-এ মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাহিদা নূর সুইটিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঝটিকা মিছিলের অভিযোগে।
এই অভিযানগুলোতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন ধানমন্ডি, বনশ্রী, মতিঝিল ও বাড্ডায় নজরদারি রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাবেক আইনসভা সদস্য, উপজেলা ও থানা পর্যায়ের নেতা, শিক্ষার্থী এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সমর্থকরা এটিকে ‘রাজনৈতিক দমন’ বলে অভিহিত করছেন, আবার বিরোধীরা এটিকে ‘ন্যায়বিচার’ বলে দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভিযানগুলো ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে, তবে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
ডিবির অভিযান রাজধানীর শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। ১৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার, ককটেলসহ অস্ত্র উদ্ধার, এবং আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।