ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংকট: নেতানিয়াহু-আইডিএফ বৈঠকে তীব্র মতভেদ
ইসরায়েলের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেতানিয়াহু ও আইডিএফ জেনারেল স্টাফের বৈঠক।
বিশ্ব ডেস্ক: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আজ সোমবার তেল আবিবের কিরিয়া হেডকোয়ার্টার্সে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এবং আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির।
বৈঠকে আইডিএফ জেনারেল স্টাফ ফোরামের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের মূল আলোচ্য
আলোচনায় গাজা, লেবানন এবং ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহকে কেন্দ্র করে জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল হুমকির জন্য অপেক্ষা করে না, বরং অগ্রিম পদক্ষেপ নেয়। অন্যদিকে, আইডিএফ প্রধান জামির সতর্ক করেন—গাজায় পূর্ণাঙ্গ দখল ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
গাজার পরিস্থিতি
আইডিএফ জানায়, তারা গাজা সিটির প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহকে ঘিরে একটি বাফার জোনও তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গাজা সিটি জয়ের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। তবে তিনি শর্ত দিয়েছেন—অক্টোবর ৭ তারিখ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
এই পরিকল্পনা নিয়ে আইডিএফ প্রধান জামির দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁর মতে, এটি দীর্ঘমেয়াদে পূর্ণ সামরিক দখলের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বন্দি মুক্তির বিষয়েও দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। জামির পূর্ণাঙ্গ চুক্তির পক্ষে, আর নেতানিয়াহু আংশিক চুক্তিকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।
লেবানন ও হিজবুল্লাহ
উত্তর সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা লেবাননের ভেতরে অন্তত ২২০টিরও বেশি হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। জামির ঘোষণা দেন, উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘরে ফেরানো হবে এবং প্রয়োজনে হিজবুল্লাহকে লাগাতার আঘাত করা হবে। নেতানিয়াহু দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “যে আমাদের ক্ষতি করতে চাইবে, আমরা তাকে আরও বড় ক্ষতি করব।”
সিরিয়া ও ইরান প্রসঙ্গ
বৈঠকে সিরিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য নিরাপত্তা চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়। আগামীকাল এই বিষয়ে একটি বিশেষ সভা বসবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় চাপ দিচ্ছে, বিশেষত ড্রুজ সম্প্রদায় ও আইডিএফ প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে।
একই সঙ্গে ইরানের “রাইজিং লায়ন” অপারেশনে আইডিএফের সাফল্যের প্রশংসা করা হয়। জেনারেল স্টাফের অবদানকে এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
নববর্ষের আবহ
বৈঠক শেষে উপস্থিত সবাই ইহুদি নববর্ষ রোশ হাশানা উপলক্ষে টোস্ট তোলেন। যুদ্ধের মধ্যেও ঐক্য, আশা এবং নতুন বছরের শান্তির বার্তা দেওয়া হয়। তবে রাজনৈতিকভাবে এই সময়টি স্পর্শকাতর। কারণ গাজা পরিকল্পনা নিয়ে নেতানিয়াহু ও আইডিএফ প্রধান জামিরের মধ্যে মতভেদ প্রকট। ডানপন্থী মন্ত্রীরা যেমন ইতামার বেন গভিরও পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। একই সময়ে বন্দি পরিবারের ফোরাম চাপ দিচ্ছে—এখনই চুক্তি করার সময়।
ভবিষ্যতের দিক
নেতানিয়াহু জাতিকে আহ্বান জানান হোম ফ্রন্ট কমান্ডের নির্দেশ মেনে চলতে এবং ধৈর্য ধরতে। তিনি বলেন, “আমরা একসঙ্গে লড়ব, একসঙ্গে জিতব।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বৈঠক গাজা ও লেবাননের যুদ্ধকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। তবে বন্দি মুক্তি ও যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
ইসরায়েলের নাগরিকরা নববর্ষে শান্তি ও স্থিতি কামনা করছেন। কিন্তু দেশের নেতৃত্ব স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও আপস করা হবে না।