লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল নির্দেশনায় বিএন‌পি’র সম্ভাব্য প্রার্থীরা চূড়ান্ত পর্যায়ে

বিএনপি নির্বাচনী প্রস্তুতি: তারেক রহমানের নেতৃত্বে মাঠে সক্রিয়তা।

টুইট ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করতে শুরু করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করছেন এবং দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে তৎপর রয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রথম জাতীয় নির্বাচন।

প্রার্থী নির্বাচনের অগ্রগতি

বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ২০০ প্রার্থীকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হয়েছে। আরও ৫০টির বেশি আসনে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। সমমনা দল এবং ১২-দলীয় জোটের সাথে আসন ভাগাভাগির বিষয় নির্ধারণের পর বাকি আসনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি চলছে। মাঠ জরিপ এবং তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলা বাধ্যতামূলক।”

তারেক রহমানের ভূমিকা

লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলের প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারেক রহমান। বিশেষ করে যেখানে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যেমন বরিশাল-৫, সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমান জোর দিয়ে বলেছেন, দলের ঐক্য এবং জনসেবা মনোভাব নির্বাচনী জয়ের প্রধান ভিত্তি হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি এক বক্তৃতায় দলের নেতাদের বলেছিলেন, “বিএনপি হবে সেবা, ন্যায়বিচার এবং দক্ষতার প্রতীক। জনসেবার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।”

নির্বাচনী ইশতেহার ও জরিপ

মাঠ-জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হচ্ছে। দল ইতোমধ্যেই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে এবং খাত অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন করেছে। তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়েছে, যাতে ছাত্রদল ও যুবনেতারা প্রাধান্য পায়, তবে জ্যেষ্ঠ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের আসন নিশ্চিত রাখা হয়েছে।

নির্দিষ্ট আসন ও সম্ভাব্য প্রার্থী

ঢাকা: ঢাকা-৪ (তানভীর আহমেদ রবীন), ঢাকা-৮ (মির্জা আব্বাস), ঢাকা-১৩ (ববি হাজ্জাজ), ঢাকা-১৬ (আমিনুল হক), ঢাকা-১৭ (ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ)।

উত্তরাঞ্চল: পঞ্চগড়-১ (ব্যারিস্টার নওশাদ জমির), পঞ্চগড়-২ (ফরহাদ হোসেন আজাদ), কুড়িগ্রাম-৩ (তাসভীরুল ইসলাম), পাবনা-২ (একেএম সেলিম রেজা হাবিব)।

দক্ষিণ-পশ্চিম: চুয়াডাঙ্গা-১ (শামসুজ্জামান দুদু), ঝিনাইদহ-৪ (সাইফুল ইসলাম ফিরোজ)।

দক্ষিণাঞ্চল: যশোর-৩ (অনিন্দ্য ইসলাম অমিত), খুলনা-৩ (রকিবুল ইসলাম বকুল), ভোলা-২ (হাফিজ ইব্রাহীম), বরিশাল-১ (জহির উদ্দিন স্বপন)।

অন্যান্য: ফরিদপুর-৪ (শহীদুল ইসলাম বাবুল), সুনামগঞ্জ-১ (মাহবুবুর রহমান)।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। বিএনপি ডিসেম্বর ২০২৫-এ দ্রুত নির্বাচন চেয়েছিল, যা মেনে নেওয়া হয়নি।

তারেক রহমান নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে দেশে ফিরে আসতে পারেন। বিজয়ী হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।

জামায়াতে ইসলামী আলাদাভাবে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বাদ দেওয়ার দাবি করছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের গুজব অস্বীকার করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তরুণ নেতৃত্ব ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভারসাম্য, মাঠ-জরিপের উপর ভিত্তি করে প্রার্থী নির্বাচন, এবং তারেক রহমানের লন্ডন-ভিত্তিক নেতৃত্ব দলকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। তবে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে জরিপ পদ্ধতি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রথম জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জপূর্ণ।

বিএনপির লক্ষ্য পরিষ্কার: দলের ঐক্য বজায় রেখে জনগণের আস্থা অর্জন, জনসেবা বাড়ানো এবং ‘ধানের শীষ’ প্রতীকী চিহ্নের মাধ্যমে নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করা।