ARSA ও আরাকান আর্মির তীব্র সংঘর্ষ, সীমান্তে সতর্কতা

শিরোনাম: মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলে ARSA ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষ তীব্র, সীমান্তে সতর্কতা জারি।

বিশ্ব ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের (পুরনো আরাকান) মাউংড’ তহসিলের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ১৬–২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। নাইখংছড়ি উপজেলার সীমান্ত থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরাকান হিল (Arakan Tila) এলাকায় এই লড়াই চলছে।

এই এলাকা বর্ডার পিলার-৫৫-এর নিকটে এবং নাইখংছড়ি বর্ডার আউটপোস্ট (১১ নম্বর বিজিবি) অধীনে আসে।

সংঘর্ষের মূল পক্ষ হলো আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (ARSA) এবং আরাকান আর্মি (AA)। ARSA-এর দাবি, তারা AA-এর একটি ক্যাম্পে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে এবং সেখানে থেকে বড় পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে রকেট-প্রপেল্ড গ্রেনেড (RPG), AK-47, G3 ও G4 রাইফেল, ল্যান্ডমাইন এবং রকেট অন্তর্ভুক্ত। AA-এর পক্ষ থেকে একজন নিহত এবং একজন বন্দি হয়েছে বলে ARSA দাবি করেছে। AA ARSA-কে “বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী ফ্যানাটিক রোহিঙ্গা বিদ্রোহী” হিসেবে অভিহিত করেছে।

এই সংঘর্ষের পূর্বসূত্র হিসেবে, ১৫-১৬ সেপ্টেম্বর থেকে মাউংড’-এর বিভিন্ন স্থানে তীব্র লড়াই হয়েছে। এর আগে, ৯ সেপ্টেম্বর রাথেডাউং তহসিলে AA মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি আউটপোস্ট দখল করে ১০০ সৈন্যকে বন্দি করেছে। এছাড়া ১৬ সেপ্টেম্বর ARSA-এর সমমত অন্য একটি গোষ্ঠী, আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (ARA), AA-এর অবস্থান আক্রমণ করেছে।

বাংলাদেশে প্রভাব

বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সীমান্তে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। নাইখংছড়ি অঞ্চলে গোলাবর্ষণের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ১৬ সেপ্টেম্বর এক মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে একজন রোহিঙ্গা নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ৩০০–৪০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে।

মানবিক পরিস্থিতি

AA-এর নিয়ন্ত্রণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের উপর জোরপূর্বক নিয়োগ, লুটপাট এবং গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, AA সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করছে। ARSA-এর নিয়োগকার্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে শিশু সৈনিকদেরও জড়িত করার তথ্য পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, রাখাইন অঞ্চলে ২০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে।

এই সংঘর্ষ মিয়ানমারের ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধের অংশ। AA রাখাইনের ৯০% এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সীমান্তের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করছে। ARSA-কে মিয়ানমার সেনাবাহিনী (জান্তা) এবং AA উভয়ই শত্রু মনে করে, যদিও কখনো কখনো জান্তা ARSA-কে অস্ত্র সরবরাহ করে AA-এর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা গণহত্যার পর ARSA আরও সক্রিয় হয়েছে।

ভিডিও ও ছবি সহ প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা পাওয়া গেছে, যদিও দুই পক্ষের দাবি পরস্পরবিরোধী। ২০ সেপ্টেম্বরের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, সংঘর্ষ এখনও চলছে।

মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে চলমান এই সংঘর্ষ স্থানীয় ও সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জন্য বড় মানবিক ঝুঁকি তৈরি করছে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সীমান্ত নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় তৎপর হতে হবে।