চুগতাই আর্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫: ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান-তুরস্ক ঐক্য

চুগতাই আর্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫: পাকিস্তান-তুরস্কের ভ্রাতৃত্বের স্মৃতিচিহ্ন ইস্তাম্বুলে উদযাপিত।

টুইট ডেস্ক: পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যে অটুট ভ্রাতৃসম্পর্কের প্রতীক হিসেবে ‘পাকিস্তান-তুরস্ক: দুই রাষ্ট্র, এক জাতি’ বিষয়ক থিমে আয়োজিত চুগতাই আর্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিখ্যাত পাকিস্তানি শিল্পী আব্দুল রহমান চুগতাইয়ের নামে নামকরণকৃত এই বার্ষিক প্রতিযোগিতা ২০১১ সাল থেকে পাকিস্তানের তুরস্ক দূতাবাসের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে, যা তুরস্কের হাই স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও শৈল্পিক প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাকিস্তানের তুরস্ক রাষ্ট্রদূত ড. ইউসুফ জুনায়েদ, তুরস্কের ইস্তাম্বুলের গভর্নর দাউদ কুস, পাকিস্তান কনস্যুলেটের কর্মকর্তা মুরাত মুচাহিত ইয়েনতুর, তুরস্কের জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং সাংবাদিকমণ্ডলী। ইস্তাম্বুলের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের চিত্রকলায় পাকিস্তান ও তুরস্কের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ঐক্যের উজ্জ্বল প্রতিফলন দেখা গেছে।

প্রতিযোগিতার পটভূমি ও উদ্দেশ্য

চুগতাই আর্ট অ্যাওয়ার্ডস তুরস্কের বিভিন্ন প্রদেশের হাই স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি জাতীয় প্রতিযোগিতা, যা পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুরস্কের তরুণ প্রজন্মের কাছে নিয়ে যায়।

২০১১ সাল থেকে এটি অনুষ্ঠিত হলেও, এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বিভিন্ন শহরে—যেমন অ্যাঙ্কারা, কোনিয়া, বুর্সা, বিটলিস, অ্যাডানা, ইজমির—এবং এবার ইস্তাম্বুলে—আয়োজিত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক বন্ধনকে উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়।

আব্দুল রহমান চুগতাই (১৮৯৭-১৯৭৫) পাকিস্তানের জাতীয় শিল্পী হিসেবে পরিচিত, যিনি মুঘল, পারস্য, মিনিয়েচার পেইন্টিং এবং আর্ট নুভোর প্রভাবে তার অদ্বিতীয় ‘চুগতাই স্টাইল’ গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর কাজগুলোতে ইসলামিক ইতিহাস, মুঘল রাজপরিবার এবং পাঞ্জাবি-পারস্য লোককথার প্রতিফলন রয়েছে। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর তিনি জাতীয় শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পান। এই অ্যাওয়ার্ডস তার নামে নামকরণ করে পাকিস্তানের শিল্প ঐতিহ্যকে তুরস্কের সঙ্গে যুক্ত করে।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ও অর্জন

এবছরের প্রতিযোগিতায় তুরস্কের বিভিন্ন স্কুল থেকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিনজনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। প্রথম পুরস্কার লাভ করেন তুজলা মেহমেত টেকিরাপ আনাতোলু লিসেসির ছাত্রী এলিফ যুহেইলা আতায়সেন। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন শেহিত ইউজবাশি ইউসুফ কেনান এমটিএল-এর যেয়নেপ আককান, এবং তৃতীয় স্থান পান গোকসেল বাক্তাগির জিএসএল-এর এলদা ইয়িলদান। পুরস্কারগুলো হিসেবে নগদ অর্থ, সার্টিফিকেট এবং সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, যা ছাত্র-ছাত্রীদের শৈল্পিক প্রতিভার স্বীকৃতি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকরা পাকিস্তানের স্মৃতিচিহ্ন, সংস্কৃতি এবং দুই দেশের ঐক্যের থিমে আঁকা চিত্রকলা প্রদর্শন করেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য: দুই দেশের অটুট বন্ধন

পুরস্কার বিতরণের সময় রাষ্ট্রদূত ড. ইউসুফ জুনায়েদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “পাকিস্তান ও তুরস্কের সম্পর্ক সামঞ্জস্য, পারস্পরিক সম্মান এবং সাধারণ আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এবছরের থিম ‘দুই রাষ্ট্র, এক জাতি’ আমাদের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। এই প্রতিযোগিতা দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আমাদের ভাগ করা ঐতিহ্যের প্রতি অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে।” তিনি অংশগ্রহণকারীদের প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করে বলেন, “এই চিত্রকলাগুলোতে পাকিস্তান-তুরস্কের ভ্রাতৃত্বের সুন্দর চিত্র ফুটে উঠেছে।”

গভর্নর দাউদ কুসও বক্তব্যে দুই দেশের সাংস্কৃতিক সংযোগকে উজ্জীবিত করে বলেন, “এই অনুষ্ঠান তুরস্কের তরুণদের পাকিস্তানের সমৃদ্ধ শিল্পকলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।”
তুরস্কের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান দূতাবাসের অফিসিয়াল এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্ট @PakinTurkiye-এর পোস্টে অনুষ্ঠানের ছবি শেয়ার করা হয়েছে, যাতে অংশগ্রহণকারীদের উল্লাস এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের আনন্দ ফুটে উঠেছে। পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হয়েছে এবং নিয়েনিসাফাক ইংলিশের মতো মিডিয়া আউটলেটগুলো এটিকে কভার করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দূতাবাসের পরিকল্পনায় অনুসারে, এই অ্যাওয়ার্ডস আরও বিস্তৃত করে তুরস্কের সব প্রদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে, যাতে দুই দেশের মধ্যে শিল্পীয় সেতুবন্ধন আরও মজবুত হয়। এটি শুধু শিল্প প্রতিযোগিতা নয়, বরং দুই জাতির ঐক্যের প্রতীক।

এই অনুষ্ঠান পাকিস্তান-তুরস্কের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে আরও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের পথ প্রশস্ত করবে।