রাজশাহীতে শতাধিক হেক্টর ফসল ডুবে প্রায় ৬০০ পরিবার পানিবন্দী
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি ডুবে গেছে এবং নদীর পাড় ভেঙে বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আকস্মিক বন্যায় ইতোমধ্যে শতাধিক হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, যার কারণে প্রায় ৬০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ফসল হারানো কৃষকরা কাঁচা ধান কেটে গরু-মহিষকে খাওয়াচ্ছেন। বুধবার (১৩ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বানভাসিদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী হিসেবে চাল বিতরণ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চকরাজাপুরের মাঠগুলোতে পানি থৈ-থৈ অবস্থায়। গলা পানিতে নামিয়ে কৃষকরা কাঁচা ধান কেটে গরুর জন্য প্রস্তুত করছেন। চায়না বেগম (৩৫) ও স্বামী শমশের আলী (৪০) জানিয়েছেন, পাঁচ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার টাকা। শমশের আলী বলেন, “কাঁচা ধান গরুর জন্য কেটে নিচ্ছি, এবার আমরা কী খেয়ে বাঁচবো সেই চিন্তায় দিশেহারা।”
চরাঞ্চলবাসীরা জানিয়েছেন, পলাশী ফতেপুর মাঠে সবচেয়ে বেশি ফসলহানি হয়েছে। ধান কিছুটা পেকেছে এমন কৃষকরা শ্রমিক সংকটে পড়েছেন; একজন শ্রমিক এক বেলা ধান কাটার জন্য ৮০০ টাকা নিচ্ছেন। মজিবর শিকদারের ১০ বিঘা পেঁপে বাগানও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকেই ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে অন্যত্র চলে গেছেন। যারা যেতে পারেননি, তারা সাপ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। আনেরা বেগম ও স্বামী বানেজ মিয়া জানিয়েছেন, তারা গত রাতে একটি সাপ মেরেছেন।
চকরাজাপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে পলাশী ফতেপুর, কালিদাসখালী, আতারপাড়া, চৌমাদিয়া ও দিয়াড়কাদিরপুরের প্রায় ৬০০ বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। বর্তমানে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়-সহ প্রায় ৫০টি পরিবার নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি জানান, বানভাসিদের জন্য ত্রাণসামগ্রী এখন খুবই প্রয়োজন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানিয়েছেন, চরাঞ্চলের প্রায় ৮০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে এবং ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, প্রাথমিকভাবে ২২০টি পরিবার পানিবন্দী হয়েছেন। বুধবার (১৩ আগস্ট) তাদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। পরে বরাদ্দ পেলে নতুন করে তালিকা করে সকলকে পুনরায় চাল বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।