জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশ
টুইট ডেস্ক : দীর্ঘ আলোচনার পর বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সোমবার (২৮ জুলাই) এই খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের শাসনব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এটি এমন এক সময়ে প্রকাশ পেল, যখন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সফল ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পটভূমিতে দেশ পুনর্গঠনের দাবি জোরালো হয়েছে। ঐ আন্দোলনের পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে গঠিত হয় ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশন—যার প্রতিবেদন পর্যালোচনার পরই গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সনদে কী রয়েছে?
জুলাই জাতীয় সনদে মূলত সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন–এই ছয়টি খাতে কাঠামোগত ও আইনি সংস্কারের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সনদে বলা হয়, গত দেড় দশকে দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুর্বল করে একচ্ছত্র শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর ফলে রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতি জন্ম নিয়েছে।
সনদের খসড়ায় দাবি করা হয়, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নাগরিকদের আত্মত্যাগের ফলে এই সনদ প্রণয়নের ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা একটি সুশাসিত, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের পথনকশা হিসেবে বিবেচিত হবে।
সংস্কার প্রক্রিয়া ও কমিশনের কাজ
সনদে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে গঠন করা হয় ৬টি কমিশন। এসব কমিশন জানুয়ারির মধ্যে সরকারকে সুপারিশ জমা দেয়। পরে ফেব্রুয়ারিতে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যার মূল কাজ ছিল—সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সর্বসম্মত জাতীয় রূপরেখা তৈরি করা।
প্রায় ৪৪টি বৈঠকের মধ্য দিয়ে ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত জমা দেয়। প্রথম পর্যায়ের আলোচনার ভিত্তিতে দ্বিতীয় ধাপে গৃহীত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে এই ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া।
মূল অঙ্গীকারনামা
সনদের শেষে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে:
জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে প্রণীত এই সনদ পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
সংবিধান ও আইন সংশোধনসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিশ্চিত করা।
নির্বাচনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সকল সংস্কার বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা।
এই সনদের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদান।
২০২৪ সালের গণ-আন্দোলন ও অভ্যুত্থানকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও চলমান আলোচনা শেষে সনদের চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করা হবে এবং তা হবে অন্তবর্তী সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের পূর্বশর্ত ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি।