সোহাগ হত্যাকারীদের পক্ষে দাঁড়াবে না কোনো বিএনপিপন্থী আইনজীবী

টুইট ডেস্ক: পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের নৃশংস হত্যা ঘটনার পর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, ঢাকা বার ইউনিট, হত্যাকারীদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের পটভূমিতে সংগঠনটি সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সকল আসামির দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে।

গত কয়েকদিন আগে, মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সোহাগ ওরফে লাল চাঁদ (৩৯) নামে এক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা হামলাকারীরা পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনাটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে দেখা যায় একদল হামলাকারী সোহাগের ওপর নির্মম আক্রমণ চালায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডটি সম্ভবত চাঁদাবাজির জন্য ঘটেছে। ঘটনার পর পুলিশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে, তবে আসল অপরাধীরা এখনো ধরা পড়েনি।

সোমবার (১৪ জুলাই) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, ঢাকা বার ইউনিট, একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে তারা সোহাগ হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেবে না। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সকল আসামিকে চিহ্নিত করে তাদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।” সংগঠনটি এই ঘটনায় বিএনপির ওপর ঢালাওভাবে দায় চাপানোর বিরোধিতাও জানিয়েছে।

বিবৃতিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম দাবি করেছে যে, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিএনপি দেশের সবচেয়ে নির্যাতিত ও নিপীড়িত দল হিসেবে গণ্য হয়। তাদের মতে, “পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি এই দলকে নিশ্চিহ্ন করতে কোনো অত্যাচার বাদ রাখেনি। তথাপি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা সব অত্যাচার সহ্য করে দলের পতাকা তুলে ধরেছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা, যেমন মিটফোর্ড হাসপাতালের সোহাগ হত্যা, খুলনায় যুবদল নেতার হত্যা এবং চাঁদপুরে মসজিদের ইমামের ওপর হামলা, তাদের মর্মাহত করেছে। বিশেষ করে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সত্ত্বেও বিএনপি ও তার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর অশোভন স্লোগান দেওয়া ও দায় চাপানোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

সংগঠনটি দাবি করেছে যে, “ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর ও অদৃশ্য শক্তি সুপরিকল্পিতভাবে তদন্ত ছাড়াই চাঁদাবাজির মতো ঘৃণ্য অপবাদ আরোপ করে বিএনপিকে দোষী করার চেষ্টা করছে।” তাদের মতে, এই ধরনের অভিযোগ বাংলাদেশের সবচেয়ে মজলুম দলের প্রতি অন্যায়।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিট সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে সকল আসামির গ্রেফতার ও বিচারের দাবি করেছে। এছাড়া, তারা তার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছে যেন কোনো বিজ্ঞ আইনজীবী সোহাগ হত্যা মামলায় আসামিদের পক্ষে দাঁড়ায় না।

এই সিদ্ধান্তটি হংকং-এর রাজনৈতিক ও আইনি বৃত্তে তীব্র আলোচনার কারণ হয়েছে। সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুরান ঢাকায় সহিংসতার বৃদ্ধি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার ওপর বিতর্ক চলছে, যেখানে অনেকে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিবাদ করছেন, আবার অন্যরা নিরপরাধ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন।

সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এই সিদ্ধান্ত একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এই ঘটনা পুরান ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দুর্বলতাকে উন্মুক্ত করেছে। সংগঠনের আহ্বান ও নিন্দা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির ভূমিকা ও দায়িত্ব নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু করেছে।

তবে, হত্যাকারীদের শনাক্তকরণ ও বিচারে ত্বরান্বিত পদক্ষেপ না হলে এই এলাকায় সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।