“দুই বছর প্রতিদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া সম্ভব”—হুঁশিয়ারি ইরানি জেনারেলের!

টুইট ডেস্ক: ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর একজন শীর্ষ উপদেষ্টা দাবি করেছেন, ইরান এমন সামরিক সক্ষমতা অর্জন করেছে যে, তারা ইচ্ছা করলে পরবর্তী দুই বছর প্রতিদিন ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে এবং তবুও তাদের মজুদ শেষ হবে না।

৭ জুলাই (সোমবার) মেহের নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুতির সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। আমাদের গুদাম, ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং সামরিক সুবিধাসমূহ এতটাই বিস্তৃত যে, এখনো আমরা আমাদের প্রকৃত সামরিক ক্ষমতার সামান্য অংশই প্রকাশ করেছি।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা যদি ইসরায়েল ও আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যাই এবং টানা দুই বছর প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করি, তবুও আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো খালি হবে না।”

ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ

গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো সরাসরি ইরানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়ে আক্রমণ শুরু করে। একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে সংঘাতের সূচনা হয়। এর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়।

এরপর টানা নয় দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটি, যোগাযোগ অবকাঠামো এবং প্রতিরক্ষা সিস্টেম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

২২ জুন ভোরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘর্ষে সরাসরি যুক্ত হয়। তাদের ভারী B-2 বোমারু বিমানগুলো ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক আক্রমণ চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ সংঘর্ষকে আরেক ধাপে নিয়ে যায়।

পরদিন ২৩ জুন সন্ধ্যায় ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক বিমানঘাঁটি আল উদেইদ-এ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর জানায়, ওই হামলায় কোনো হতাহত না হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়।

যুদ্ধবিরতি ও পরিণতি

২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেন, “ইসরায়েল ও ইরান আমাদের মধ্যস্থতায় পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।”

ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়, তারা মার্কিন কূটনৈতিক প্রস্তাব মেনে নিয়েছে এবং “ইরানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সামরিক লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে।”

তেহরান পাল্টা বিবৃতিতে জানায়, “আমরা প্রমাণ করেছি—ইরানের ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালানো অসম্ভব। এই যুদ্ধবিরতি আমাদের কূটনৈতিক ও সামরিক বিজয় নিশ্চিত করেছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ও মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের বাস্তবতা নতুন করে মূল্যায়ন করতে বাধ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।

আইআরজিসি উপদেষ্টার এই বক্তব্য মূলত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে মনস্তাত্ত্বিক চাপের মধ্যে রাখতে এবং আঞ্চলিক অবস্থান জোরালো করতে দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে এই ধরণের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ কীভাবে সম্ভব—তা নিয়ে এখনো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে বিতর্ক চলছে।