রাশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী বরখাস্ত, সীমান্ত দুর্নীতিতে জড়িতের অভিযোগ
পুতিনের রদবদল: পরিবহনমন্ত্রী বরখাস্ত, সীমান্ত দুর্নীতি ও ড্রোন হামলায় ব্যর্থতার অভিযোগ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আকস্মিকভাবে বরখাস্ত করেছেন দেশটির পরিবহনমন্ত্রী রোমান স্তারোভইৎকে।
সোমবার (৭ জুলাই) মস্কোতে প্রেসিডেন্টের জারি করা এক ডিক্রির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। এই রদবদল এমন এক সময়ে এলো, যখন রাশিয়ার পরিবহন খাত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মারাত্মক চাপে রয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং সীমান্ত প্রতিরক্ষা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যর্থতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
কে এই রোমান স্তারোভইৎ?
রোমান স্তারোভইৎ ছিলেন রাশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রধান এবং পূর্বে কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পুতিনপন্থী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। পরিবহনমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি কুরস্ক অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে ছিলেন।
স্তারোভইৎকে সরিয়ে তার স্থানে এখনো কোনো স্থায়ী মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপমন্ত্রী ইয়েভজেনি দিয়েভকে।
কী অভিযোগে তাকে সরানো হলো?
১. ড্রোন হামলায় অব্যবস্থাপনা
ইউক্রেনের চালানো ধারাবাহিক ড্রোন হামলায় রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে একাধিক রেলস্টেশন, লজিস্টিক সেন্টার ও বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিবহন নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ায় বিমান ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ ও সামরিক রসদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় চরম ব্যর্থতা ও পূর্বপ্রস্তুতির অভাব দেখা যায়।
২. সীমান্ত প্রতিরক্ষা তহবিল আত্মসাৎ
স্তারোভইৎ যখন কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর ছিলেন, তখন সীমান্ত প্রতিরক্ষার জন্য বরাদ্দ শত কোটি রুবলের তহবিল দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তার উত্তরসূরি গভর্নর অ্যালেক্সি স্মারশিনকে এরইমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, স্তারোভইতের প্রশাসনের অধীনেই অর্থ লোপাটের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়।
পুতিনের পদক্ষেপ ও বার্তা
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি পুতিন প্রশাসনের অদক্ষতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করছেন। তার সরকার ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দেশজ অবকাঠামো ও সুরক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ পুতিনের সরকারের ভেতরে বাড়তে থাকা চাপ ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বারবার দুর্বলতা ধরা পড়েছে। ড্রোন হামলার পর সামরিক সরবরাহ ও জনপরিবহন ব্যাহত হওয়ায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল।
এ অবস্থায় স্তারোভইতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারকে কিছুটা দায়মুক্তি দিতে পারে, তবে এর মাধ্যমে দুর্নীতির গভীর সংকটও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।