নিখোঁজের ৩ দিন পর ঢাবি শিক্ষার্থীর লাশ মিলল বোট ক্লাবের লেকে

উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে বিভোর সৌমিকের নিথর দেহ উঠল ভেসে—পরিবারে কান্নার রোল, প্রশ্ন চারপাশে

টুইট নিউজ২৪: তিন দিন আগে নিখোঁজ হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাসিন রাইহান সৌমিক-এর (৩০) নিথর দেহ আজ সকালে উদ্ধার করা হয়েছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বি-ব্লক বোট ক্লাবের একটি লেক থেকে। তার নিখোঁজ হওয়া, লাশের হঠাৎ মিলন এবং মৃত্যুর ধরণ—সব মিলিয়ে এই ঘটনাটি ঘিরে এলাকায়, বিশেষ করে শিক্ষিত মহলে, চরম উদ্বেগ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সৌমিক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বোচারপুকুর গ্রামে হলেও পরিবারসহ থাকতেন শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায়।

একজন মেধাবী, অমায়িক ও ভবিষ্যতকেন্দ্রিক তরুণ হিসেবে তিনি এলাকাতেও পরিচিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যার পর হাঁটতে বেরিয়ে আর ফেরেননি সৌমিক। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। শুক্রবার পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে এবং বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। রোববার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় শাজাহানপুর উপজেলার বিখ্যাত বি-ব্লক বোট ক্লাবের লেকে একটি দেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে শনাক্ত করে সৌমিককে।

শাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম শফিক সাংবাদিকদের বলেন—

“সৌমিকের দেহে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আমরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক কিছু পাইনি। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সব দিক খোলা রাখা হয়েছে—অ্যাকসিডেন্ট, আত্মহত্যা না কি অন্য কিছু—তা নির্ধারণ করবে ময়নাতদন্ত ও তদন্ত রিপোর্ট।

পরিবার ও এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

সৌমিকের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের দাবি—

“সে একজন সুশৃঙ্খল, স্বপ্নবাজ তরুণ ছিল। আত্মহত্যার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সামনে তার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।”

পড়শিরা জানান, সৌমিক ছিলেন নম্র-ভদ্র, কারো সঙ্গে কোনো বিরোধের খবর ছিল না।

বোট ক্লাব লেক ও অতীত ঘটনা

যে লেকে তার মরদেহ পাওয়া গেছে, সেটি বগুড়ার অভিজাত এলাকা বি-ব্লকে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ক্লাব লেক, যেখানে সাধারণত উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ ঘুরতে যান। পূর্বে এই লেক বা আশপাশে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। ফলে স্থানীয়দের মাঝেও রহস্য ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

একজন তরুণ, স্বপ্নবান গ্র্যাজুয়েট, আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করে এমন মৃত্যু—তা সহজে মেনে নেওয়া কঠিন। সৌমিকের পরিবার, বন্ধু, শিক্ষার্থী সমাজ এবং সচেতন জনগণ জানতে চায়—এই মৃত্যু কি কেবল একটি দুর্ঘটনা, না কি এর পেছনে আছে কোনো অজানা ষড়যন্ত্র?

প্রশাসনের কাছে সকলের একটাই দাবি—“সত্য উদঘাটিত হোক, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক।”