ন্যাটো প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির চুক্তি “বিপ্লবাত্মক অগ্রগতি”–বললেন মহাসচিব মার্ক রুটে
বিশ্ব ডেস্ক: ন্যাটো (NATO) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ একটি নতুন চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, যার আওতায় প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হবে। ন্যাটোর নতুন মহাসচিব মার্ক রুটে এই চুক্তিকে “quantum leap” বা বিপ্লবাত্মক অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছেন।
কী বললেন রুটে?
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ২০২৫ সালে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা ২০২৪ সালের €৫০ বিলিয়ন ইউরো সহায়তার চেয়েও বেশি হবে। তিনি এই সহায়তাকে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির জবাব হিসেবে অভিহিত করেছেন।
“আমরা ইউক্রেনকে যে সহায়তা দিচ্ছি তা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ। রাশিয়া শুধু স্বল্পমেয়াদে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদেও একটি প্রধান হুমকি।”
তিনি বলেন, ইউক্রেনের আত্মরক্ষার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের এই আর্থিক ও সামরিক সহায়তা অব্যাহত ও জোরালো করতে হবে।
সামরিক সহায়তার সম্ভাব্য দিকসমূহ-উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ট্যাংক, ড্রোন ও গোলাবারুদের নতুন চালান, ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা সহায়তা, ন্যাটোর তত্ত্বাবধানে সরাসরি ফান্ড ম্যানেজমেন্ট।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন;
“এই নতুন প্রতিশ্রুতি উচ্চাভিলাষী, তবে তা প্রয়োজনীয়। ইউরোপীয় মিত্ররা এবার আরও বেশি দায়ভার গ্রহণ করবে।”
তিনি আরও বলেন, এই প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বৃদ্ধি ন্যাটোর সম্মিলিত সামরিক সক্ষমতায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে এবং ভবিষ্যতের হুমকি মোকাবিলায় জোটকে আরও প্রস্তুত রাখবে।
নতুন চুক্তির মূল দিকগুলো-
সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২% ছাড়িয়ে যাবে।
আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।
রুশ আগ্রাসন এবং চীনের সামরিক প্রসার মোকাবেলায় প্রস্তুতি জোরদার করা হবে।
ইউরোপীয় সদস্যরা আমেরিকান নির্ভরতা কমিয়ে “ভার বহনের ভারসাম্য” আনবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইউরোপীয় নিরাপত্তা শঙ্কা বাড়ছে।
ফিনল্যান্ড ও সুইডেন সদ্য ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে, ফলে প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে জোটের ভিতরে নতুন সমন্বয় প্রয়োজন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর ব্যয়ের বড় অংশ বহন করে আসছে – যা নিয়ে অতীতে ট্রাম্প প্রশাসন অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল।
প্রতিক্রিয়া:
যুক্তরাষ্ট্র: নতুন প্রতিশ্রুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে, “ইউরোপের আরও দায়িত্ব নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ”।
জার্মানি ও ফ্রান্স: বড় বাজেট বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে নতুন ড্রোন, সাইবার প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ নজরদারি প্রকল্পে বিনিয়োগ শুরু করেছে।
পোল্যান্ড, বাল্টিক দেশসমূহ: রাশিয়ার হুমকির কারণে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ন্যাটোর ভবিষ্যৎ টিকে থাকার জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে দায়ভার ভাগাভাগির মাধ্যমে কৌশলগত স্থিতিশীলতা আরও বাড়বে। তবে বাজেট বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বাস্তব চ্যালেঞ্জ থাকছেই।
ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির এই ঐতিহাসিক চুক্তি জোটের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো এবং ভবিষ্যৎ হুমকি মোকাবেলায় দৃঢ় পদক্ষেপের প্রতীক।