ভারতের কূটনৈতিক ধাক্কা: জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাননি
কানাডার সিদ্ধান্তে ঘরে-বাইরে চাপে নরেন্দ্র মোদি: জি-৭ সম্মেলনে অনুপস্থিতি কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে কংগ্রেস
বিশ্ব ডেস্ক: জি-৭ সম্মেলনের আমন্ত্রণ তালিকা থেকে ভারতের অনুপস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কানাডার আলবার্টার কানানাস্কিসে ১৫ জুন শুরু হতে যাওয়া এবারের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইতালি, কানাডা ও জার্মানির শীর্ষ নেতারা।
আমন্ত্রিত দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউক্রেন ও অস্ট্রেলিয়া—তবে নেই ভারত।
এই অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কংগ্রেস পার্টি এটিকে নরেন্দ্র মোদির “একটি বড় কূটনৈতিক ব্যর্থতা” বলে অভিহিত করেছে। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, “জি-৭ সম্মেলনে ভারতকে আমন্ত্রণ না জানানো আন্তর্জাতিকভাবে দেশের মর্যাদার জন্য একটি ধাক্কা। এটি সরকারের দুর্বল বিদেশনীতির প্রমাণ।”
তিনি আরো স্মরণ করিয়ে দেন, মোদির পূর্বসূরি ড. মনমোহন সিং জি-৮ (পূর্ববর্তী জি-৭) সম্মেলনে নিয়মিত আমন্ত্রিত ছিলেন। ২০০৭ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সিং-মার্কেল জলবায়ু চুক্তি আলোচনার ইতিহাস তুলে ধরে জয়রাম বলেন, “এ ধরনের আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারত সবসময় বিশেষ মর্যাদা পেত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মোদি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন উঠছে।”
কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি
জি-৭ থেকে ভারতের বাদ পড়া মোটেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ২০২৩ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে খালিস্তানপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলেন। এর পর থেকেই ভারত-কানাডা সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
এই উত্তেজনার রেশ এখনো কাটেনি, এবং জি-৭ থেকে ভারতের বাদ পড়া সম্ভবত তারই ফলাফল। ভারত যদিও এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে, তবুও কানাডার দিক থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থান প্রশ্নের মুখে?
জি-৭ সম্মেলনে ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউক্রেনের মতো উন্নয়নশীল বা সংঘাতময় রাষ্ট্রের নেতারা আমন্ত্রিত হলেও, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি ও জি-২০ সভাপতিত্ব করা ভারতের বাদ পড়া ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির “বিশ্বগুরু” ভাবমূর্তি ঘরের মাঠে যতটা কার্যকর, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ততটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। বিশেষ করে মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সংঘাত—এই বিষয়গুলোতে ভারতের অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অস্বস্তিতে ফেলছে।
জি-৭ এ ভারতের অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে নরেন্দ্র মোদি সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা। একদিকে কানাডার সাথে সম্পর্কের অবনতি, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে প্রভাব হারানোর এই চিত্র মোদি সরকারের “ভিশন 2047” এবং “গ্লোবাল সাউথ”-এর নেতৃত্বর দাবিকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
বিরোধী দল কংগ্রেস এই ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করে ঘরোয়া রাজনীতিতে চাপ তৈরি করছে—আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও মোদি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নতুন করে আলোচনায় আসছে।