পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আচরণবিধি লঙ্ঘনের সংবাদ প্রকাশের জেরে রাজশাহীর তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) উদ্যোগে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেয় রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলা শাখা, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ, রাজশাহী সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ, প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমের শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। তিনি তার অপকর্ম লুকাতে এখন সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে চান। তিনি সাংবাদিকদের হয়রানির পথ থেকে সরে না এলে সাংবাদিকরাও তার রাজনীতির কবর রচনা করবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

কর্মসূচিতে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘২০০৮ সালে শাহরিয়ার আলম রাজনীতিতে আসার শুরুতে আমি নিজে তাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। তাকে নিয়ে ঢাকায় মিডিয়া অফিসগুলোতে গিয়েছি। তার জন্য সহায়তা চেয়েছি। সাংবাদিকরা সহযোগিতা করেছেন বলে তিনি এমপি-প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। আজ তিনি এর প্রতিদান দিচ্ছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তিনি যদি আর বাড়াবাড়ি করেন, কোন সাংবাদিককে হুমকি দেন তাহলে এর পরিণাম ভাল হবে না। আর যদি সাংবাদিকদের অসম্মান করে কথা বলেন, আমরা সামাজিক সংগঠন সাংবাদিকদের নিয়ে যতদূর যাওয়া লাগে যাব। এ ধরনের লোকের বিরুদ্ধে লড়াই হবে রাজপথে।’

সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন,

‘২০০৮ সালে শাহরিয়ার আলমের ছিল ২ কোটি টাকা। এখন তিনি ৮৯ কোটি টাকার মালিক। এত টাকা কোথায় পেলেন তার জবাব এবার দিতে হবে। সাংবাদিকরা আপনার মতো অবৈধ টাকায় বাড়ি-গাড়ি করেনি। আপনি করেছেন। সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ করতে আসবেন না। আপনি যে কাজ করেছেন, তার জন্য আপনাকে ধিক্কার জানাই।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের চাকরি খাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন যেন কেউ তার কুকর্ম তুলে ধরার সাহস না পান। আপনার এ ধরনের কর্মকাণ্ড চললে বিএফইউজে এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন বসে থাকবে না। এর সমূচিত জবাব দেওয়া হবে।’

বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য বদরুল হাসান লিটন বলেন,

‘আমরা শুনেছি রাজশাহীর একটি জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল পদ্মাটাইমসকে তিনি ব্লক করে রেখেছেন তিন মাস ধরে। অথচ পদ্মাটাইমস একটি সরকার নিবন্ধিত পোর্টাল। প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কতদূর দৌড়াতে পারেন, সেটি আমরাও দেখতে চাই। সবকিছুরই জবাব দেওয়া হবে।’

রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মিজানুর রহমান মিনুর কাছে গিয়েছিলেন। মিনু বলেছিলেন, ‘তোমার বয়স কম’। তারপর বাইম মাছের মতো এসে ভিড়েন আওয়ামী লীগে। এমপি হয়ে শুরু হয় তার দাম্ভিকতা। আর একবার যদি সাংবাদিকদের রক্তচক্ষু দেখান, আপনার এমপি-মন্ত্রিত্ব থাকবে না। এ জন্য সাংবাদিকদের পাশে সাধারণ জনগণও দাঁড়িয়ে গেছে।’

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন আরইউজের সভাপতি রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমরা এই সরকারের সঙ্গে আছি। আমরা চাই সুষ্ঠভাবে নির্বাচন শেষ হোক। সরকারও সেটি করতে বদ্ধ পরিকর। কিন্তু শাহরিয়ার আলমের মতো দুষ্টু লোকের সঙ্গে নেই। আমরা তাকে বটগাছে তুলেছি, আবার নামিয়েও আনব। তিনি সাংবাদিকদের রক্তচুক্ষ দেখিয়েছেন। এই মানববন্ধন পণ্ড করার নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। আগামীতেও ব্যর্থ হবেন। সবই আসবে গণমাধ্যমে। এবার বাড়াবাড়ি করলে তার রাজনীতির কবর রচনা হয়ে যাবে।’

আরইউজের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হকের সঞ্চালনায় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন- জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটন, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম প্রমুখ।

মানববন্ধনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, জিয়াউল গনি সেলিম, সুব্রত দাস, সাইফুর রহমান রকি, আজাহার উদ্দিন, মো. সালাহউদ্দিন, সেলিম জাহাঙ্গীর, মনজুরুল হক, আমজাদ হোসেন শিমুল, এনায়েত করিম, শাহরিয়ার অন্তু, রিমন রহমানসহ রাজশাহীতে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

শাহরিয়ার আলম রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সমর্থক মেরাজুল ইসলাম রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন যে, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে হুমকি দিয়েছেন। এই লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

তবে সংবাদ মিথ্যা দাবি করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহকারী একান্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের কাছে আজকের পত্রিকা, প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিবেদকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

যদিও মেরাজুল ইসলামের ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে শোকজ করেছিলেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মো. সেফাতুল্লাহ। এরপর গত রোববার প্রতিমন্ত্রী কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন। ভুলতত্রুটি হয়ে থাকলে, সে ব্যাপারে মার্জনা চাওয়া হয় তার লিখিত জবাবে। পরে সোমবার বিকেলে আদালত এক আদেশে তাকে কারণ দর্শানোর দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করতে সতর্ক করেন।