ভারতের বন্দর কৌশল: বাংলাদেশের চারপাশে ‘ঘিরে ফেলার’ পরিকল্পনা?
টুইট প্রতিবেদন: ভারত তার কৌশলগত অবস্থান মজবুত করতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক বন্দর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তিনটি বন্দর হলো মিয়ানমারের সিত্তে, ইরানের চাবাহার ও বাংলাদেশের মংলা। এই তিনটি বন্দরই পরিচালনা করছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিম (IPGL)।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বন্দরের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভারত সরাসরি বাংলাদেশের ভূখণ্ড এড়িয়ে বিকল্প বাণিজ্যিক রুট তৈরি করছে—যা একদিকে যেমন ভারতের কৌশলগত নিরাপত্তা জোরদার করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশকে একপ্রকার ‘স্ট্র্যাটেজিক বৃত্তে’ বন্দি করার ইঙ্গিতও দিচ্ছে।
ভারতের কৌশলগত বন্দর প্রকল্পসমূহ
১. কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প, মিয়ানমার
ভারতের মিজোরাম রাজ্যকে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করা, বাংলাদেশের ভূখণ্ড এড়িয়ে বিকল্প রুট তৈরি করা।
কলকাতা → সিত্তে (সমুদ্রপথ)
সিত্তে → পলেটও (নৌপথ)
পলেটও → জোরিনপুই (সড়কপথ)
নির্মাণকাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। বন্দর পরিচালনা করছে IPGL।
২. চাবাহার বন্দর, ইরান
চুক্তি স্বাক্ষর: মে ২০২৪
মেয়াদ: ১০ বছর, প্রতি ৩ বছর পর নবায়নের সুযোগ
বিনিয়োগ: $১২০ মিলিয়ন সরাসরি, $২৫০ মিলিয়ন ঋণ সুবিধা (সূত্র: The Hindu)
এটির উদ্দেশ্যে পাকিস্তানকে বাইপাস করে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা।
৩. মংলা বন্দর, বাংলাদেশ
পরিস্থিতি: ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও IPGL এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও চুক্তির মেয়াদ, শর্তাবলী বা কত শতাংশ বন্দর ব্যবস্থাপনা ভারত পেয়েছে—তা গোপন রাখা হয়েছে।
সরকার, বিরোধী দল, এমনকি চট্টগ্রামকেন্দ্রিক বাম দলগুলোর মধ্যেও এ বিষয়ে নীরবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর। এখান থেকে ভারতের পশ্চিবঙ্গ ও ত্রিপুরা অঞ্চলে পণ্য পরিবহন সহজ হয়েছে।
বাংলাদেশের কৌশলগত উদ্বেগ
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই কৌশলগত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ছে। একদিকে যেমন উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য বিকল্প রুট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।
বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো—মংলা বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশলগত পয়েন্ট ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হলেও সরকার কিংবা বিরোধী দল কেউ এ বিষয়ে জনসমক্ষে কিছু বলছে না। এতে জনমনে সন্দেহ ও অসন্তোষ বাড়ছে।
মিয়ানমার থেকে ইরান পর্যন্ত ভারত যেভাবে কৌশলগতভাবে বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তা স্পষ্টভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নির্ভরতা কমানোর অংশ।
বাংলাদেশের মংলা বন্দর যদি ভারতের দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তবে বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
এ অবস্থায় বন্দর ব্যবস্থাপনার চুক্তিগুলো জনসমক্ষে আনা এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য প্রয়োজন—তা না হলে বাংলাদেশের কৌশলগত স্বার্থ মারাত্মকভাবে বিপন্ন হতে পারে।
এই বিষয়ে আরও অনুসন্ধান, প্রশ্ন এবং ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিম- সাথে আলোচনা করতে উদ্যেগ গ্রহন করা দরকার। কারণ একটি দেশের বন্দর শুধু অর্থনীতিই নয়, তার ভূরাজনৈতিক অবস্থানও নির্ধারণ করে।
সূত্র: সকল তথ্য ও উপাত্ত একাধিক সুত্র হতে সংগৃহিত।