পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে ইউনূস সরকার কোণঠাসা
সংকটের বরফ গলছে, পদত্যাগ নয়—ঘুঁটি সাজানোর নতুন উদ্যোগ
টুইট ডেস্ক: রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্তঃকলহ ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের ঘূর্ণিপাকে পড়ে যাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারে অবশেষে বরফ গলতে শুরু করেছে। নানা নাটকীয়তা ও আবেগপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের পর পদত্যাগ নয়, বরং নতুন কৌশলে ঘুঁটি সাজিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনূস প্রশাসন।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, ড. ইউনূস আজ দিনের শেষে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচিত দুটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং সরকারের টিকে থাকা নিয়ে এ বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই বৈঠকের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করবে ইউনূসের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল।
গত ৪৮ ঘণ্টায় পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় নেয়। যমুনা থেকে ভেসে আসে আবেগ ও ক্ষোভের সুর। এক পর্যায়ে পদত্যাগের হুমকি পর্যন্ত আসে প্রফেসর ইউনূসের পক্ষ থেকে। কিন্তু পরবর্তীতে বোঝা যায়, কিছু চক্রের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি হিসেবে চিহ্নিত বিএনপি, জামায়াত এবং সশস্ত্র বাহিনী—এই তিন শক্তির কেউই প্রকৃতভাবে সম্পৃক্ত ছিল না বা রাখা হয়নি। ফলে শুরুতেই দানা বাঁধে অনৈক্য ও বিভ্রান্তি।
ছাত্রদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হয়, যা আন্দোলনের মূল শক্তিকে দুর্বল করে তোলে। পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায় এবং অভ্যুত্থানের সম্ভাব্য শক্তিগুলো পড়ে যায় চরম অস্বস্তিতে। তখন থেকেই শুরু হয় সমঝোতার প্রচেষ্টা।
পদত্যাগ নয়, নতুন পরিকল্পনায় ইউনূস প্রশাসন
যমুনার পরিস্থিতিতে এখন আর পদত্যাগের প্রস্তুতি নেই—বরং রাজনৈতিক দাবার নতুন চাল চালানোর প্রস্তুতি চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসনের ভেতরের কিছু চরিত্র যারা ছায়া থেকে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তারা এখন নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। অনিবার্যভাবে অন্তত তিন থেকে চারজন প্রভাবশালী উপদেষ্টাকে বিদায় নিতে হতে পারে।
একজন ভালো ব্যাংকার, বক্তা এবং এনজিও সংগঠক হিসেবে ইউনূস সফল হলেও একজন দক্ষ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। তার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাই সরকারের সংকটের মূল কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন।
নির্বাচন হবে ডিসেম্বরেই, বিলম্ব মানেই বিপদ
এখন আর ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই নির্বাচন যেন আর বিলম্বিত না হয়, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করছেন, বিলম্ব ঘটলে পর্দার আড়ালের শক্তি নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে এবং নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে ইউনূস প্রশাসন।
বিদেশি মিত্ররাও তাদের উদ্বেগ জানিয়েছেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন—এই সরকারকে ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, বরং বাংলাদেশকেন্দ্রিক হতে হবে। কেবল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে সিদ্ধান্ত নিলে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন সরকার পরিচালনা সম্ভব নয়।
বর্তমানে ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য মাঠে নেই। মাত্র ছয়জন ঢাকার বাইরে কোনো অনুষ্ঠান বা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। এমন বাস্তবতায় প্রফেসর ইউনূস যদি সত্যিই একটি গতিশীল ও কার্যকর সরকার গঠনে আগ্রহী হন, তবে তাকে নিজের ঘরের ভেতরের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতেই হবে।
সঙ্কট মোচনে একমাত্র পথ—সঠিক নেতৃত্ব, আস্থাভাজন কৌশল এবং বাস্তববাদী পদক্ষেপ। রাজনৈতিক শত্রু-মিত্র এখন স্পষ্ট। এই মুহূর্তে ড. ইউনূসের সামনে দুটি পথ—ঘুঁটি হারানো কিংবা নতুন করে সাজিয়ে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়া।