ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. জয়ন্ত নার্লিকার আর নেই: প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা
বিশ্ব ডেস্ক: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানপ্রচারক ড. জয়ন্ত নার্লিকার প্রয়াত হয়েছেন। বিজ্ঞানের জগতে এই ক্ষতি এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করল। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভারতসহ সমগ্র বৈজ্ঞানিক সমাজ।
বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞানপ্রচারক ড. জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকার আজ মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে ভারতের পুনে শহরে তাঁর নিজ বাসভবনে ঘুমন্ত অবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
ড. নার্লিকার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেমে আসে শোকের ছায়া। তিনি শুধু একজন গবেষক নন, ছিলেন এক মহান শিক্ষক, লেখক ও প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিত্ব, যিনি বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
যুগান্তকারী গবেষণা ও হোয়াইল-নার্লিকার তত্ত্ব
ড. নার্লিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের মধ্যে অন্যতম হলো তার সহকর্মী স্যার ফ্রেড হোয়াইলের সঙ্গে যৌথভাবে প্রস্তাবিত হোয়াইল–নার্লিকার মহাবিশ্বতত্ত্ব। এই তত্ত্ব বিগ ব্যাং তত্ত্বের বিকল্প হিসেবে এক সময় উল্লেখযোগ্য আলোচনা তৈরি করেছিল। এই কাজ তাকে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত করে তোলে।
তিনি তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত হলেও কোয়ান্টাম কসমোলজি ও গ্র্যাভিটেশনাল থিওরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। তার কাজ গবেষণার ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রতিষ্ঠান নির্মাতা হিসেবে অসামান্য ভূমিকা
ড. নার্লিকার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র IUCAA (Inter-University Centre for Astronomy and Astrophysics)–এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে তিনি বহু তরুণ বিজ্ঞানীর পথ প্রশস্ত করেন। তার হাতে গড়া IUCAA এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্মানজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
বিজ্ঞান প্রসারের একজন নিঃস্বার্থ দূত
ড. নার্লিকার বিজ্ঞান নিয়ে শুধু গবেষণাগারেই ছিলেন না—সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দেওয়াটাও ছিল তার অন্যতম মিশন। তার লেখা বহু বই ও প্রবন্ধে তিনি বিজ্ঞানকে সহজ করে উপস্থাপন করেন। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখাও ছিল তার বড় একটি অংশ। ‘It Happens Only in India’, ‘The Scientific Edge’, ও ‘Cosmic Safari’ সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বই রয়েছে তার ঝুলিতে।
শ্রদ্ধা ও শোকবার্তা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা এবং সাধারণ মানুষ—সবাই তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। একজন শোকবার্তায় বলা হয়েছে:
“The passing of Dr. Jayant Narlikar is a monumental loss to the scientific community. He was a luminary, especially in the field of astrophysics. His pioneering works, especially key theoretical frameworks, will be valued by generations of researchers. He made a mark as an institution builder, grooming centres of learning and innovation for young minds. His writings have also gone a long way in making science accessible to common citizens. Condolences to his family and friends in this hour of grief. Om Shanti.”
জীবন ও কর্ম
ড. জয়ন্ত নার্লিকার জন্ম ১৯৩৮ সালে। তার বাবা শ্রী. ভি. ভি. নার্লিকারও ছিলেন গণিতজ্ঞ। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি। সেখানেই তিনি অধ্যাপক স্যার ফ্রেড হোয়াইলের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।
তিনি পদ্মভূষণসহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন। তার প্রয়াণে শুধু বিজ্ঞান জগত নয়, ভারতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে রইল।
তার শেষকৃত্য সম্পর্কে এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে জানা গেছে, তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী হয়তো বিজ্ঞান গবেষণার কাজে তার দেহ দান করা হবে।
ড. জয়ন্ত নার্লিকার হয়তো আর আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার সৃষ্টি, গবেষণা ও বিজ্ঞানপ্রেম আগামী প্রজন্মের জন্য এক অমর অনুপ্রেরণা হয়ে রইবে।