সেনা কর্মকর্তাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়লেন চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যরা
টুইট ডেস্ক: চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের চার দফা দাবিতে চলমান আন্দোলন আজ নতুন মোড় নিয়েছে। বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় আন্দোলনকারী সদস্যরা সেনা কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকে দেন এবং প্রতিবাদস্বরূপ গাড়ির সামনেই শুয়ে পড়েন।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে এই নাটকীয় ঘটনাটি ঘটে। এর আগে দুপুর ২টা থেকে আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বৈঠকে বসেন। তবে দাবি পূরণে ইতিবাচক আশ্বাস না পাওয়ায় তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
আন্দোলনকারী চাকরিচ্যুত সদস্যরা চারটি মূল দাবিতে অনড় রয়েছেন। দাবিগুলো হলো:
১. সম্পূর্ণ বেতন, ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি পুনর্বহাল: চাকরিচ্যুতির সময় থেকে অদ্যাবধি সময় পর্যন্ত তারা পূর্ণ বেতনসহ চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছেন।
২. পূর্ণ পেনশন সুবিধা: যদি কোনো সদস্যকে পুনর্বহাল করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধাসহ সম্পূর্ণ পেনশনের আওতায় আনতে হবে।
৩. একতরফা বিচার ও আইন সংস্কার: যে বিচারব্যবস্থা ও সংবিধানের ৪৫ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় শত শত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বরখাস্ত করা হয়েছে, তার সংস্কার দাবি করছেন তারা।
৪. সমন্বয়ক নাইমুল ইসলামের মুক্তি: আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত সৈনিক নাইমুল ইসলামকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনকারী সাবেক সৈনিক মো. রিপন হোসেন বলেন, “আমরা অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছি। তিন বাহিনী মিলিয়ে প্রায় ৬০০ জনকে এভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অনেককে জোর করে বাধ্যতামূলক পেনশনে পাঠানো হয়েছে, আবার অনেককে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়েছে।”
সাবেক নৌবাহিনীর সদস্য এম বাহাউদ্দিন বলেন, “আমরা ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছি। এর মধ্যে যদি ক্যান্টনমেন্ট থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে কেউ এসে কথা না বলেন, তাহলে আমরা জাহাঙ্গীর গেটের দিকে লংমার্চ শুরু করবো।”
চাকরিচ্যুত সদস্যরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, একতরফা বিচার ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনের মুখ্য বক্তব্য—“আমরা দেশের জন্য কাজ করেছি, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখেছি, অথচ আজ আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে।”
এই আন্দোলন শুধু চাকরি ফিরে পাওয়ার নয়, এটি একটি বৃহত্তর প্রশ্ন তোলে—সশস্ত্র বাহিনীতে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার। সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পথ আপাতত ব্যর্থ হলেও, আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন তারা শান্তিপূর্ণভাবে দাবির পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।