আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ?

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে নজিরবিহীন এক সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হলো দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের এক নির্দেশনায় দলের যাবতীয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি প্রার্থী দিতে পারবে না, এমনকি ব্যালটে দলের প্রতীকও থাকবে না।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে প্রজ্ঞাপন পৌঁছানোর পর নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “সরকারি গেজেট পাওয়ার পরই কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। বর্তমান বাস্তবতা ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত আইন পর্যালোচনা করে নেয়া হবে।
আইনি প্রেক্ষাপট

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO)-১৯৭২-এর ৯০ জ ধারা অনুযায়ী, সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দলের “কার্যক্রম স্থগিত” করার কথা বলেছে, তবুও এ সিদ্ধান্তই নিবন্ধন বাতিলের পথে এগিয়ে নিতে পারে ইসিকে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নজিরবিহীন মোড়—সরকারি সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটি কোনো রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে না। এর ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

শনিবার (১২ মে) রাতের জরুরি বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এই সিদ্ধান্ত নেয়। সভা শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের সম্মানে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত জরুরি ছিল।

নির্বাচন কমিশন এখনো আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করেনি। তবে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, সরকারি গেজেট হাতে পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কমিশন বৈঠকে বসবে। ইসি নিবন্ধন বহাল রাখলেও “কার্যক্রম স্থগিত” মর্মে উল্লেখ থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক সত্তাকে নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সংশোধনীতে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বলছে, আওয়ামী লীগ স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে। কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের নির্বাচনী অঙ্গনে স্থান দেওয়া পুরো জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।”

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত দলের পক্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে আমরা মনে করি না।”

শাহবাগ মোড়ে গতকাল আবারও অবস্থান নেন জুলাই অভ্যুত্থনে আহত ও নিহতদের পরিবার। তাঁদের দাবি—আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা, ‘জুলাই সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা।

২০০৮ সালে দল নিবন্ধন চালুর পর এ পর্যন্ত ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল ৫০টি। নতুন আইনে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ায় নিবন্ধন বাতিলের পথে এগোচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।