দমনপীড়নের ১৫ বছর, জনগণের কান্না: ফারজানা ইসলামের কলাম

প্রশাসনের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা

প্রশাসন একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা জনগণের জন্য ন্যায়বিচার, সুশাসন এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে কাজ করে। যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য সরাসরি কাজ করে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রশাসন কাজ করলে একটি রাষ্ট্র উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে।

অন্তর্বতীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা। রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন এ সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করে, বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রগুলোতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে।

জনগণের প্রধান প্রত্যাশা হলো প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা। একটি স্বচ্ছ প্রশাসন জনগণের আস্থা অর্জন করে এবং প্রশাসনের কাজের প্রতিটি ধাপ সহজে বোঝা যায়। জনগণ চায় প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক, ন্যায্য এবং সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হোক। এটি নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অবশ্যই তাদের দায়িত্বশীলতা এবং কর্তব্যপরায়ণতার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

রাজধানী ঢাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিএমপির তৈরি করা এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ছিনতাইকারী বেশি সক্রিয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, ভাটারা, বাড্ডা, শেরেবাংলানগর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, মিরপুর, পল্লবী, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত ও উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশ অধিকাংশ ঘটনায়ই ছিনতাইয়ের মামলা নেয় না। তারা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বাধ্য করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ডাকাতির ঘটনা ছিল ২৩০টি, চুরি ৯৬৬টি এবং খুন ২০৪টি। এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ডাকাতি ছিল ১৩৫টি, চুরি ৯০৪টি এবং খুন ২৩৩টি। বার্ষিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ডাকাতির ঘটনা ছিল ১,৫৪৬টি, চুরি ৩.০৯০টি এবং খুন ৩.০২৩টি। অন্যদিকে, ২০২৪ সালে ডাকাতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৯০২টি, চুরি ১১,৩১০টি এবং খুন ৩,৪৩২টি। অর্থাৎ ২০২৪ সালে চুরি ও খুনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ না করায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

প্রশাসন থেকে জনগণের আরেকটি বড় প্রত্যাশা হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। একটি নিরাপদ পরিবেশে বসবাস করার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। প্রশাসনের প্রধান কাজ হলো সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অপরাধ দমন করা। জনগণ চায় প্রশাসন কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করুক এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুক।

দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের কাছ থেকে জনগণের আরেকটি বড় প্রত্যাশা হলো সেবা প্রদানের গুণগত মান। জনগণ চায় প্রশাসন দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে তাদের সমস্যাগুলি সমাধান করুক। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সেবা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন যদি এই ক্ষেত্রগুলিতে দ্রুত এবং নির্ভুল সেবা দিতে পারে তবে জনগণ তাদের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠবে।

তৃতীয়ত, প্রশাসনের প্রতি জনগণের আরেকটি প্রত্যাশা হলো দুর্নীতিমুক্ত কার্যক্রম। দুর্নীতি একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। জনগণ চায় প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত থাকুক এবং কোনো ধরনের অন্যায় বা অবৈধ কার্যক্রমে লিপ্ত না হোক। এজন্য প্রশাসনের মধ্যে কঠোর নৈতিক নীতিমালা এবং কার্যকরী তদারকি ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

চতুর্থত, প্রশাসনের প্রতি জনগণের আশা হলো সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু এবং নারী-শিশুদের প্রতি প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। এদের জন্য সঠিক নীতি প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম।

পরিশেষে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে প্রশাসনের উচিত তাদের কার্যক্রমে আরো আন্তরিক এবং জনবান্ধব হওয়া। জনগণের সাথে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রাখা, তাদের সমস্যাগুলি শুনে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং নীতি নির্ধারণে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব। এভাবে কাজ করলে প্রশাসন জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

#দমনপীড়নের ১৫ বছর, জনগণের কান্না…..চল‌বে।