বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যুতে অপপ্রচার: ব্রিটিশ এমপিদের উদ্বেগ ও সমর্থনের বার্তা

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়া অপপ্রচারের বিষয়টিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা।

সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) ফর বাংলাদেশ-এর এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় তারা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।

সভা ও নেতৃত্ব:

সভাটির আয়োজন করেন এপিপিজি ফর বাংলাদেশ-এর চেয়ারপার্সন ও লেবার পার্টির এমপি আপসানা বেগম। এতে অংশ নেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম, যিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার, এবং সরকারের গৃহীত নীতিগত অগ্রগতি তুলে ধরেন।

হাইকমিশনার বলেন,

“বাংলাদেশ সরকার একটি উন্মুক্ত, জবাবদিহিমূলক ও সংবেদনশীল রাষ্ট্র হিসেবে সকল ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন—

সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের সুযোগ রয়েছে

আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে

ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং আইনি সুরক্ষায় সরকার অগ্রণী ভূমিকা রাখছে

ব্রিটিশ এমপিদের উদ্বেগ:

আলোচনায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন এমপি বলেন,

“আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু ইস্যুতে একপাক্ষিক ও অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়।”

তারা তথ্য-ভিত্তিক ও দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভ্রান্তি দূর করার ওপর জোর দেন।

গণআন্দোলন ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ:

হাইকমিশনার জানান, গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণআন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সরকার মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনছে।

রোহিঙ্গা সংকট ও আন্তর্জাতিক সহায়তা:

আবিদা ইসলাম বলেন,“ বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা ও টেকসই প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী সহায়তা এখন অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি রোহিঙ্গা সংকটকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মানবিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কনস্যুলার সেবা:

সভায় উপস্থিত ব্রিটিশ এমপিরা যুক্তরাজ্যে লন্ডনের বাইরেও বাংলাদেশি কনস্যুলার সেবা বিস্তারের পরামর্শ দেন। হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশ সরকার সকল দেশের সঙ্গে সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি-এমপি আপসানা বেগম, লর্ড হুসেইন,ব্যা, রোনেস উদ্দিন, এমপি ইমরান হুসেইন, এমপি তাহির আলী, এমপি ডন বাটলার, এমপি বব ব্ল্যাকমেন, লর্ড সাহোতা, মার্গারেট মুলানপ, ল ওয়াহ, আমান্ডা মার্টিন।

এই সভা প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের ইমেজ নিয়ে সচেতনতা ও প্রতিরক্ষামূলক কূটনীতি অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, সরকার ও বিদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের গঠনমূলক ও স্বচ্ছ বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ।