বাংলাদেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাল তালিকায় বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট
টুইট ডেস্ক : বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে লাল শ্রেণিতে রয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই শ্রেণিতে অবস্থান করছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্য নিরাপত্তার অবস্থা নিয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। প্রতিবেদনটি প্রতি ছয় মাস পর পর প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বব্যাংক খাদ্য মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৭২টি দেশকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। ৩০ শতাংশ বা তার বেশি খাদ্য মূল্যস্ফীতি থাকা দেশগুলোকে বেগুনি শ্রেণিতে, ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকা দেশগুলোকে লাল শ্রেণিতে এবং ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকা দেশগুলোকে হলুদ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতি থাকা দেশগুলোকে সবুজ শ্রেণিতে রাখা হয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, ভারত, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ এবং রাশিয়াও লাল তালিকায় রয়েছে।
বাংলাদেশে গত এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশ উচ্চ ছিল, এবং গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা ১০ শতাংশের বেশি ছিল। তবে, মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের মধ্যে ছিল, যা কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগেই গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছিল, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। তবে, গত কয়েক মাসে কিছুটা কমে এসে ১০ শতাংশের নিচে এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ফেব্রুয়ারির পর থেকে বিশ্ববাজারে কৃষি এবং শস্য পণ্যের দাম ৪ থেকে ৮ শতাংশ কমে গেছে, তবে সামনের দিনগুলোতে এসব পণ্যের দাম আবারও বাড়তে পারে। সরবরাহের সীমাবদ্ধতা ও আবহাওয়ার কারণে ভুট্টার দাম ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে চালের দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি উদ্বেগজনক সংকেত হতে পারে, বিশেষত খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকায়।
বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে আটটি দেশকে সবুজ শ্রেণিতে রেখেছে, যেগুলোর খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব দেশ হলো সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরব, ম্যাকাও, চীন, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড এবং বেনিন। তবে, বেগুনি শ্রেণিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ছয়টি দেশ এক বছর ধরে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই দেশগুলো হলো মালাওয়ি, দক্ষিণ সুদান, হাইতি, মিয়ানমার, আর্জেন্টিনা এবং তুরস্ক।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে, তবে গত এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি ছিল। বিশেষ করে গত ১০ মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এটি বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের সংকেত হতে পারে যে, খাদ্য মূল্যস্ফীতির এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য সরকারকে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে এবং খাদ্য সেবা খাতে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।