দুদকে ষড়যন্ত্রকারীরা ছিল, এখনো আছে : রাষ্ট্রপতি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুদকে ষড়যন্ত্রকারীরা ছিল, এখনো আছে। আমি (বর্তমান) চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করব। একসময় বলবও আপনাকে, কারা তখনো আমাদের বিচলিত বা বিব্রত করার চেষ্টা করেছে।’

শনিবার সকালে শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তারা পদ্মা সেতুর দুর্নীতির মামলা ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছিল। দেশকে নানাভাবে বিব্রত করার চেষ্টাকে আমরা নানাভাবে প্রতিহত করেছি, ন্যায়ের সঙ্গে আইনের মাধ্যমে। দুদকের সবা্কই আমি সাধুবাদ জানাই। সত্য কথা বলতে গেলে সবাই একমত না। দুই-একজন এর মধ্যে বিট্রে করার চেষ্টা করেছে, যেটা আমি ধরেছি। এটা একটি সুদূরপ্রসারী কাজ। আমাদের তখনকার চেয়ারম্যান ধরতে পারেন নাই। কিন্তু আমি ধরেছি। যে এজাহারটি করা হয়েছে, সেটি ফ্যাক্টের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই। তখন আমি এজাহার বদল করতে বলি।’

২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ে ঘটা পদ্মা সেতুর দুর্নীতির মামলায় বিভিন্ন দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে সমস্ত মেগা প্রজেক্টগুলো নিয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয় নাই। এটা সরকারের সাফল্য, সরকারের কর্মকর্তাদের সাফল্য। দুর্নীতি দমন সরকারের জিরো টলারেন্স ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার।

দুর্নীতিকে প্রান্তিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আরও গতি পাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আসুন উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ করি। বর্তমান বাস্তবতায় দুদকের সামনে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এ কারণে দুদককে দুর্নীতি দমন ও নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় মামলায় মোকদ্দমা নয় সার্ভিল্যান্স, ইনভেস্টিগেশন, মামলা পরিচালনায় আধুনিকীকরণ, রেকর্ড ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

দুদককে নিজস্ব আলাদা প্রসিকিউশন ইউনিট করার তাগিদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হলে আদালতে দুদকের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা সর্বোচ্চ সততার সঙ্গে আপনাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, অভাবে নয় লোভের কারণে মানুষ দুর্নীতি করে। একসময় দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হতো। দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না, এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।

দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে সরকারের অন্যান্য সংস্থার মতোই দুদক কাজ করে যাচ্ছে।

দুদক কমিশনার আছিয়া খাতুন বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের জাতীয় উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। লোভ-লালসা দুর্নীতির প্রধান কারণ। আজ দুর্নীতি শুধু সরকারি অফিসে সীমাবদ্ধ নেই, সবখানেই বাসা বেঁধেছে। দুর্নীতি নির্মূলে দুদক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, অর্থনীতির এই কঠিন সময়ে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। দেশ থেকে নানা উপায়ে টাকা পাচার হচ্ছে, এটা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষিত মানুষ ও অসাধু ব্যবসায়ীরা ডলার পাচার করছে। ডলার পাচারকারীরা দেশের শত্রু।

তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থ পাচার রোধ করা গেলে আমরা এগিয়ে যেতাম। দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়, সহনীয় মাত্রায় আনতে দুদক কাজ করছে। রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে যত অনিয়ম। এই দুই খাতে আপনি আচার্য। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অনিয়ম রোধে আপনি ব্যবস্থা নেবেন।’

এর আগে সকালে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন করেন দুদকের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। এবার ২১তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের প্রতিপাদ্য—‘উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ’।

দিবসটি উপলক্ষে আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদ্‌যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। একই সঙ্গে দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং পিকেএসএফসহ অন্যান্য এনজিওতে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সারা দেশে দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রদর্শনী, মানববন্ধন, সেমিনার ও আলোচনা সভা। সেখানে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক সংগঠন, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করছে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাইরে সারা দেশে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দৃশ্যমান ও উন্মুক্ত স্থানে দুর্নীতিবিরোধী বাণীসংবলিত ব্যানার স্থাপন, জাতীয় পতাকা ও দুদক পতাকা উত্তোলন, ফেস্টুন-বেলুন ওড়ানো, আলোচনা সভা এবং গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের জেলা তথ্য অফিসের সহযোগিতায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়/জেলা কার্যালয়/বিভাগীয় জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে ব্যাপক জনসমাগম হয় এমন স্থানে দুর্নীতিবিরোধী তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (আনকাক) সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন শুরু করে। যদিও সরকারিভাবে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটি উদ্‌যাপিত হচ্ছে। দুদকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।