ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা চরমে
টুইট ডেস্ক: কাশ্মীরের অনিন্দ্যসুন্দর পাহেলগাঁও উপত্যকা এখন আতঙ্কের নাম। গত ২২ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর ছদ্মবেশে সজ্জিত একদল জঙ্গি পর্যটকদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বিদেশিরাও রয়েছেন।
গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ জন। ভারতের সর্বশেষ কয়েক বছরের মধ্যে এটি অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা।
পরিকল্পিত নৃশংসতা
এনডিটিভি ও পিটিআই জানায়, বাইসারান উপত্যকার উপরের চারণভূমিতে গুলির শব্দ শোনা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাটি কাছ থেকে এবং লক্ষ্য করে চালানো হয়, ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন। কর্ণাটকের শিভামোগ্গার এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী তার স্ত্রী ও ছেলের সামনেই প্রাণ হারান। নিহতদের অনেকেই হিন্দু, এবং বিশ্লেষকদের মতে, এটি সাম্প্রদায়িক টার্গেটিংয়ের অংশ হিসেবেই করা হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া
ভারতের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই হামলার কড়া নিন্দা করে বলেন—
“পন্থীরা কোনো বিভেদ করে না হিন্দুদের মধ্যে, তখন আমরা কেনো জাত-পাত, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদিতে বিভক্ত থাকবো? যখন হিন্দুদের বিরুদ্ধে শত অপকর্ম, তখন ধর্মই হোক আমাদের একমাত্র বর্ম।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরাও ওদের শেষ করব।”
সরকারের কড়া প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই চলবে আরও শক্তভাবে।”
তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দ্রুত শ্রীনগরে পাঠান। অমিত শাহ দিল্লিতে জরুরি বৈঠক করেন গোয়েন্দা প্রধান ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে।
পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন
ভারত এই হামলার দায় পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ জঙ্গি গোষ্ঠী TRF-এর ওপর চাপিয়েছে, যারা লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা। পাকিস্তান হামলার দায় অস্বীকার করে এটিকে ভারতের “ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন” বলে মন্তব্য করেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করেছে, ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করেছে, সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানও ভারতীয় কূটনীতিক বহিষ্কার ও আকাশপথ বন্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও সৌদি আরব হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘও এই ঘটনার তদন্ত চেয়েছে।
যুদ্ধের আশঙ্কা
২০১৯ সালের পুলওয়ামা ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায় এই উত্তেজনা গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
ভারতের রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, পাহেলগাঁও হামলা কেবল একটি সন্ত্রাসী আঘাত নয়—এটি ভারতের নিরাপত্তা, সংহতি ও আন্তর্জাতিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এই অবস্থায় হিন্দু সমাজের ঐক্য যেমন জরুরি, তেমনি রাজনৈতিক সহনশীলতা ও কূটনৈতিক সংলাপ এখন সময়ের দাবি। না হলে “শেষ যুদ্ধ” আর খুব দূরে নয়।
সচেতন মহল মনে করেন, পাহেলগাঁওর হৃদয়বিদারক হামলা শুধু নিরীহ মানুষের প্রাণহানিই ঘটায়নি—এটি দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক আস্থাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ যেমন জরুরি, তেমনি কোনো ধর্ম, জাতি বা প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে দোষারোপ করে যুদ্ধমুখী অবস্থানে যাওয়া এই অঞ্চলের জন্য আরও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ইতিহাস বলে, যুদ্ধ কখনো স্থায়ী সমাধান নয়—বরং সহিংসতার চক্রকে দীর্ঘতর করে।
এই মুহূর্তে প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলা, স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা, এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাস মোকাবেলায় যৌথ সহযোগিতা জোরদার করা।
মানবিকতা ও শান্তিই হতে পারে সেই ভিত্তি, যেখানে দাঁড়িয়ে ঘৃণা ও সহিংসতাকে পরাজিত করা সম্ভব।