কাশ্মীর হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে

বিশ্ব ডেস্ক: কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন নিরীহ পর্যটক হত্যার ঘটনায় ভারত কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। একে “পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী হামলা” হিসেবে আখ্যা দিয়ে দেশটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জবাবে পাকিস্তানও এখন জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছে।

এ ঘটনার ফলে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

ভারতের সিদ্ধান্তসমূহ: সংকেত দিচ্ছে কঠোর অবস্থানের

সিন্ধু পানি চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা করা হচ্ছে। এই ঐতিহাসিক চুক্তি ১৯৬০ সালে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এটি একতরফাভাবে স্থগিত করার পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনে বিতর্কিত ও সংঘাতমূলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত ও সীমান্ত নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমান্তে সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়াও পাকিস্তান থেকে পণ্যের আমদানি সীমিত বা স্থগিত করার পরিকল্পনা করছে ভারত।

পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থান

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “আমরা ভারতের একতরফা আগ্রাসী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করব এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরব।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সিন্ধু চুক্তির মতো আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একতরফাভাবে স্থগিত করা আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি লঙ্ঘনের শামিল।

মধ্যস্থতার আহ্বান

আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চীন উভয় দেশের প্রতি সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্বব্যাংকও সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, “এই চুক্তির সুরক্ষা সকল পক্ষের অংশগ্রহণ ও সম্মতিতে সম্ভব। একতরফা পদক্ষেপ উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, “কাশ্মীর অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং সন্ত্রাস দমনে যৌথ পদক্ষেপ জরুরি, তবে তা হতে হবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে।”

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও অভ্যন্তরীণ চাপ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা—উভয় দেশেই জাতীয়তাবাদী মনোভাবকে উসকে দিতে এই সংকট ব্যবহার করা হতে পারে।

ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জাতীয় নিরাপত্তাকে সামনে রেখে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যা অভ্যন্তরীণ জনমতের পক্ষে কাজে আসতে পারে। অপরদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তার জোট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতবিরোধী অবস্থানকে কাজে লাগাতে পারেন।

সম্ভাব্য পরিণতি-

আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়ায় বড় ধাক্কা

নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার শঙ্কা

জলবায়ু ও পানিসম্পদ নিয়ে নতুন দ্বন্দ্ব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় মধ্যস্থতা ছাড়া পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটা একটি ‘সাংকেতিক বিপদসংকেত’, যা কেবল দ্বিপাক্ষিক নয়, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপেও নিরসন প্রয়োজন।