“আর্থ ডে ২০২৫” সবুজ অর্থায়ন ও টেকসই উন্নয়নে এমটিবির দৃঢ় প্রতিশ্রুতি
স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বের সঙ্গে একযোগে ‘আর্থ ডে ২০২৫’ উদযাপন করেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি (এমটিবি)। “আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী” (Our Power, Our Planet) প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে সচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে ব্যাংকটি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের অঙ্গীকার
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং এর সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছেন দরিদ্র জনগোষ্ঠী। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য উৎসে দ্রুত যেতে হবে।” তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০% নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশবিশেষ জ্বালানি মিশ্রণে যুক্ত করার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪,১০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের “Green Refinancing Scheme”-এর আওতায় সোলার হোম সিস্টেম, বায়োগ্যাস, উইন্ড ও হাইড্রো পাওয়ার প্রকল্পে মাত্র ৫% সুদে ঋণ দিচ্ছে এমটিবি।
সবুজ ব্যাংকিংয়ে এমটিবির নেতৃত্ব
সবুজ অর্থায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এমটিবি নিজস্ব কার্যক্রমেও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট। ব্যাংকটি ডিজিটাল ও কাগজবিহীন ব্যাংকিং সেবা, অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি, অর্থায়নে পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসন (ESG) বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
পরিবেশ রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহারে উৎসাহিত হয়ে আমরা সবাই মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি।” তিনি দেশের সব শ্রেণির মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস বা ‘আর্থ ডে ’। ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গে লর্ড নেলসনের উদ্যোগে এই দিবসের সূচনা হয়। পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই দিবস বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩টিরও বেশি দেশে পালিত হচ্ছে।
এবারের প্রতিপাদ্য—“আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী”—জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে সচেতনতা তৈরির একটি বৈশ্বিক আহ্বান।
বাংলাদেশের বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। ঘনবসতি, ভৌগোলিক অবস্থা ও সীমিত সম্পদ আমাদের পরিবেশগত সংকট আরও ঘনীভূত করেছে। যদিও বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশ মাত্র ০.৫% গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে, তবুও দেশের ওপর প্রভাব অনেক বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনিয়মিত বর্ষণ, কৃষি উৎপাদনে পতন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আমাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
টেকসই ভবিষ্যতের জন্য করণীয়
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই পৃথিবী গড়তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষ জনবল তৈরি, কর রেয়াত এবং সরকারি নীতিতে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ জরুরি। উপকূল, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে ভবিষ্যতের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
সরকার ২০২১ সালে ঘোষিত ‘জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি’ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ১০% বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য।
আর্থ ডে ২০২৫ শুধু একটি প্রতীকী দিবস নয়—এটি একটি জাগরণের মুহূর্ত। পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ, প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সবুজ অর্থায়নে নেতৃত্ব নেয়, তখন দেশের অন্যান্য খাতগুলোরও এগিয়ে আসার সময়। এখনই সময়—‘আমাদের শক্তি’ দিয়ে ‘আমাদের পৃথিবী’ রক্ষা করার।