আস্থার সংকটে রাজনীতি: বিশ্বাস নেই বলে নির্বাচনও চায় না জনগণ

বদিউল আলম লিংকন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ এক ধরনের হতাশা ও আস্থাহীনতা ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন এক সময় ছিল উৎসব, গণমানুষের অংশগ্রহণের প্ল্যাটফর্ম—আজ তা অনেকের কাছে অর্থহীন এক প্রক্রিয়া মাত্র।

কেন এই পরিবর্তন? মানুষ বা জনগণ কি আর নির্বাচনে আগ্রহী নয়? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে বলেই নির্বাচনকেও নিরর্থক মনে করছে?

আস্থার সংকটে রাজনীতি

স্বাধীনতার পর গত কয়েক দশকে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাত ধরে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা পেয়েছি। কিন্তু খুব কম সময়েই মানুষ সত্যিকারের অংশীদার বোধ করতে পেরেছে রাষ্ট্র পরিচালনায়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভুলে যায়, আর বিরোধী দলে থাকাকালীন কেবল ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার কৌশলেই ব্যস্ত থাকে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে রাজনীতি মানে হয়ে উঠেছে ‘ক্ষমতার লড়াই’, ‘স্বার্থের সংঘর্ষ’ এবং ‘প্রতিশ্রুতির প্রতারণা’।

নির্বাচন বিমুখতার কারণ

১. অযোগ্য প্রার্থী ও মনোনয়ন বাণিজ্য: যোগ্যতা নয়, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অর্থই হয়ে উঠছে নির্বাচনের টিকিট পাওয়ার মাপকাঠি।
২. প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব ও প্রহসনের নির্বাচন: অনেক সময় আগেই জানা থাকে কে জিতবে, কে হারবে। এতে ভোটার মনে করে—তার ভোট মূল্যহীন।
৩. সহিংসতা ও ভয়ভীতি: রাজনৈতিক সহিংসতা, হামলা-মামলা, প্রশাসনের পক্ষপাত—এসব সাধারণ মানুষকে রাজনীতি ও নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দিচ্ছে।
৪. দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্কৃতি: নির্বাচনের পর যারা নির্বাচিত হন, তাদের অনেকে দুর্নীতির দায়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন। এতে মানুষের ভোটের প্রতি আস্থা কমে।

মানুষ কি চায়?

মানুষ রাজনীতি চায়—তবে সৎ ও দায়বদ্ধ রাজনীতি। মানুষ চায় ভোট দিতে, কিন্তু চায় তার ভোটে সঠিক নেতৃত্ব আসুক। মানুষ নির্বাচন চায়, কিন্তু তা যেন হয় স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, উৎসবমুখর। মানুষ নেতৃত্ব চায়, কিন্তু তা যেন হয় জনকল্যাণকামী, দায়িত্বশীল এবং আস্থাযোগ্য।

করণীয়

নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।

দলগুলোর মধ্যে গঠনতান্ত্রিক গণতন্ত্রের চর্চা বাড়াতে হবে।

নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে হবে।

শিক্ষিত, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বকে সামনে আনার সুযোগ তৈরি করতে হবে।

নির্বাচনের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে দায়ী মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশ্বাসঘাতকতা ও ক্ষমতা কেন্দ্রিক আচরণ। মানুষ এখনো পরিবর্তন চায়, কিন্তু সে চায় আস্থাভাজন রাজনৈতিক পরিবেশে।

গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে মানুষের সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর তার একমাত্র পথ—সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।

আপনার মতামত জানান।