গাজায় ফের হামলা, জাতিসংঘে উঠে এলো বিপর্যয়ের চিত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুদ্ধবিরতি চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় আবারও ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এবারের আক্রমণ আগের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। জাতিসংঘও জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় মানবিক বিপর্যয় পৌঁছেছে চরমে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হাজারো জীবনের বেদনার চিত্র ফুটে উঠেছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে গাজার প্রায় ৪ লাখ মানুষ আবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যা মোট ফিলিস্তিনি জনগণের প্রায় ১৮ শতাংশ। তিনি বলেন, “গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। শিশুদের বড় একটি অংশ নিহত বা গুরুতর আহত হচ্ছে। কেউ কেউ পঙ্গুত্ববরণ করছে।”

ডুজারিক আরও বলেন, “বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের বারবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কিন্তু সংকুচিত ভূখণ্ডের মধ্যে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো হামলার শিকার হচ্ছে বলে জানান তিনি। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হচ্ছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ নানা স্থাপনা। গত ২ এপ্রিল উত্তর গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যক্লিনিকে বিমান হামলায় অন্তত ২২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও ছিলেন।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এ হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, এটি একটি নির্মম যুদ্ধাপরাধ। তাদের দাবি, ইসরায়েল পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে।

জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্ব গণমাধ্যম হামলার তীব্র সমালোচনা করলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসনের ওপর কোনো কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বরং জাতিসংঘের কর্মীদের লক্ষ্য করেই পরিচালিত হচ্ছে হামলা, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন মাত্রা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গাজায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের মতে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের সামনে আর কোনো বাঁচার সম্ভাবনা থাকবে না। “এই মুহূর্তে বিশ্ব যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে আমরা সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো,” বলছেন গাজার এক বাসিন্দা।

মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো সব শক্তির সামনে এখন একটাই প্রশ্ন—এই নৃশংসতা কতকাল চলবে? আর কত মৃত্যু হলে থামবে এই যুদ্ধযন্ত্র?