নতুন পরিকল্পনায় এগোবে এনসিপি
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। দলটি দাবি করছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে তারা চায়, এ নিষেধাজ্ঞা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নয়, বরং বিচারিক প্রক্রিয়ায় কার্যকর হোক। বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তত দলটির নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এনসিপি।
এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো যেন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে তারা সোচ্চার থাকবে। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করতেই তারা মাঠে নামবে। ঈদের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
একজন এনসিপি নেতা, যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি, জানিয়েছেন, সেনা অভ্যুত্থানের গুজব ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রতিহত করতে ঈদের পর মাঠে কর্মসূচি নেবে দলটি। তবে এখনো চূড়ান্ত কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিষয়ে এনসিপির নেতারা সতর্ক থাকবেন বলে জানা গেছে। তারা সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে চলমান প্রচারকে সমর্থন করবেন না। তবে দলটি রাজনীতির সামরিকীকরণ ও বিরাজনীতিকরণের যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন,
“আমরা বর্তমানে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে শেষ পর্যন্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়। শুরু থেকেই দলটি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এরপর এনসিপি ইউনূসের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে দলীয়ভাবে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার বদলে নিবন্ধন বাতিলের দাবি সামনে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
এনসিপি মনে করে, নিবন্ধন বাতিল হলে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। দলটির নেতাদের মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার শেষে দলটি নিষিদ্ধ হতে পারে, তবে সে প্রক্রিয়া দীর্ঘ হবে। তাই আপাতত নিবন্ধন বাতিলই তাদের লক্ষ্য।
একজন এনসিপি নেতা জানান, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে দল নিষিদ্ধ না করার সুপারিশের কারণে তারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছেন। এখন নিবন্ধন বাতিলের মাধ্যমে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করবেন। পরবর্তী সময়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হলে সেটি আইনগতভাবে টেকসই হবে এবং বিতর্কের সুযোগ কম থাকবে।
এনসিপি আশা করছে, যথাযথ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা যাবে।