নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা ইস্যুতে ছাত্রদল-শিবির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ঢাবি ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা: রাজনৈতিক বিতর্ক ও বাস্তব চিত্র
টুইট ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারী শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের এক কর্মচারী কর্তৃক পোশাক নিয়ে হেনস্তার ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে, যা পুরো ঘটনাকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে।
সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের ওই বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে প্রতিবাদ জানায় ঢাবি শাখার শিবিরের সভাপতি এস. এম. ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খাঁন।
এর আগে সোমবার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এক কর্মসূচিতে ‘একজন ধর্ষক বা নারী নিপীড়নকারীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিল ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি’ বলে বক্তব্য দেন।
ছাত্রদলের অভিযোগ
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির দাবি করেন, “একজন ধর্ষক বা নারী নিপীড়নকারীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিল ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি।” তার বক্তব্যে ঢাবির শিবির সভাপতির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং ছাত্রদল নেতাকর্মীরা এই ইস্যুতে শিবিরের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়।
শিবিরের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা
ছাত্রদলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ এবং সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান এক বিবৃতিতে এই অভিযোগকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করেন। তারা বলেন, “ছাত্রশিবিরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাত্রদল ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে।”
শিবির নেতাদের দাবি, ঘটনার সময় শাহবাগ থানার পুলিশ প্রশাসনের আহ্বানে পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং সেখানে উপস্থিত ‘সংক্ষুব্ধ জনতা’র দাবি বোঝার জন্য শিবির সভাপতি থানায় গিয়েছিলেন।
তারা বলেন, “তিনি কাউকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে যাননি, বরং উপস্থিত জনতাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।”
শাহবাগ থানার ওসির বক্তব্য
ঘটনার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, “সেদিন রাতে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিতে ‘তৌহিদি জনতা’ নামে একটি দল থানার সামনে জমায়েত হয়েছিল। তারা আসামিকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই ছাড়িয়ে নিতে চেয়েছিল। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রনেতা এবং সাংবাদিকদের থানায় ডাকা হয়।”
তিনি আরও জানান, “সকালে শিবির সভাপতিসহ অন্য ছাত্রনেতাদের সহযোগিতায় আমরা আসামিকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কোর্টে চালান করতে সক্ষম হই।”
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী জানান, “সেদিন শাহবাগ থানায় ‘তৌহিদি জনতা’ নামে একদল মানুষ অভিযুক্তকে ছাড়াতে যায়। আমরা গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পক্ষ থেকে তাদের বুঝিয়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলেছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “সেসময় ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদও ভোর পাঁচটার দিকে থানায় এসেছিলেন এবং একইভাবে উপস্থিত জনতাকে আইন মানার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ছাত্রদলের বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই ঘটনা স্পষ্টতই রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। একদিকে ছাত্রদল শিবিরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, অন্যদিকে শিবির নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে চেষ্টা করছে। শাহবাগ থানার ওসি এবং ছাত্রসংসদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, শিবির সভাপতি ঘটনাস্থলে থাকলেও তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও সঠিক তথ্য প্রকাশের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইছে, রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে গিয়ে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।