নারীর নিরাপত্তা : বর্তমান বাস্তবতা ও করণীয়
বিনোদন ডেস্ক : ভূমিকানারীদের অধিকার ও মর্যাদা উদযাপনে শতাধিক বছর ধরে নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নারী দিবস এক ধরনের বিষাদের বার্তা নিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও নারী উত্ত্যক্তের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
অথচ ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে দেশের সংকটময় মুহূর্তে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আজও তারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরলস পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এখনো নারীরা বাইরে নিরাপদ নন। এবারের নারী দিবসে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে শোবিজ তারকাদের উদ্বেগ ও মতামত তুলে ধরা হলো।
নারী নিরাপত্তা নিয়ে তারকাদের উদ্বেগ
মনিরা আক্তার মিঠুনারীদের নিরাপত্তা বাংলাদেশে কখনোই পুরোপুরি ছিল না। অতীতের মতো বর্তমানেও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিনেত্রী মনিরা আক্তার মিঠুর মতে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অপরাধীদের শাস্তির অভাব নারীদের নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম কারণ।
তিনি মনে করেন, যারা নারীদের ওপর সহিংসতা চালায়, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। নারী দিবস উপলক্ষে নানা আলোচনার আয়োজন হয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো নারী নির্যাতনের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
অপি করিমঅভিনেত্রী অপি করিম নারীদের পরিশ্রম ও অবদানের দিকটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একজন পুরুষ গড়ে সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টা কাজ করেন, অথচ একজন নারী ১২৮ ঘণ্টা শ্রম দেন। এই পরিসংখ্যান আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য ও দায়িত্বের অসাম্যকে স্পষ্ট করে। তিনি প্রশ্ন রাখেন—এই বৈষম্যের সমাধান কে দেবে?
অপু বিশ্বাসচিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল নারীদের হাত ধরে শুরু হয়। একজন পুরুষের সাফল্যের পেছনে একজন নারীর অবদান থাকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নারীদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেই এগিয়ে যেতে হয়। তিনি মনে করেন, প্রতিটি দিনই নারী দিবস, কারণ প্রতিদিনই একজন নারী নতুন লড়াই শুরু করেন।
কাজী নওশাবা আহমেদঅভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ ব্যক্তিজীবনে একজন মা, বোন ও কন্যা হিসেবে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনায় গভীরভাবে ব্যথিত। তিনি সাম্প্রতিক কিছু ভয়াবহ ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সমাজে ভালো থাকার কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তার মতে, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত এই পরিস্থিতি বদলাবে না।
সোমনুর মনির কোনালসংগীতশিল্পী কোনাল নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করা, মাগুরায় আট বছরের এক শিশুর ধর্ষণের ঘটনা আমাদের সবার বিবেককে নাড়া দেওয়া উচিত। তারকাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ছে, যা সমাজে নারীদের প্রতি বৈষম্যের আরেকটি দিক তুলে ধরে।
নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায়
১. কঠোর আইন প্রয়োগ: ধর্ষণ, নিপীড়ন ও নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা দরকার। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ২. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমকে নারী অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে আরও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ৩. নারীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা: নারীরা যদি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হন, তাহলে তারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন এবং তাদের ওপর সহিংসতার ঝুঁকি কমবে।
৪. সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: বর্তমানে নারীরা অনলাইনে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য সাইবার আইন কার্যকর করতে হবে এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ৫. নারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা: রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহারনারী নিরাপত্তা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিবসের আলোচনা হওয়া উচিত নয়; এটি প্রতিদিনের বাস্তবতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হওয়া উচিত। শুধুমাত্র আইনের মাধ্যমে নয়, বরং পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই পারে নারীদের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে। শোবিজ তারকারা এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করবে।