আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার চেষ্টার জেরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ রাত ১১টা পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে এবং তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা

এই সংঘর্ষে পুলিশের নগর বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) এক সদস্যসহ চারজন আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন, মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক লাভলী খাতুন, তার আড়াই বছর বয়সী কন্যা লামিয়া, সিটিএসবি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন এবং রেলওয়ের কর্মচারী মো. রনি। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষ চলাকালে তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়, যার মধ্যে একটি সাংবাদিক জাহিদ হাসান সাব্বিরের। তিনি সংবাদ সংগ্রহে ঘটনাস্থলে গেলে তার মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে বাকি দুটি মোটরসাইকেলের মালিকদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

সংঘর্ষের সূত্রপাত

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে মহিলা দলের নেত্রী লাভলী খাতুন ও তার অনুসারীরা কাদিরগঞ্জ এলাকার একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারসহ বসবাস করেন বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু।

লাভলী খাতুন দাবি করেন, তিনি মোস্তাক আহমেদকে ভবনে প্রবেশ করতে দেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ ও নিরাপত্তা প্রহরীর খাতায় মোস্তাকের নাম থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযান শেষে তার ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করা হলেও মোস্তাক পলাতক রয়েছেন।

দুই পক্ষের সংঘর্ষ

মোস্তাক আহমেদকে না পাওয়ায় মহিলা দল নেত্রী লাভলী সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেন জীবনকে দায়ী করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মারুফের অনুসারীরা দড়িখড়বোনা এলাকায় লাভলীর বাড়িতে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। প্রতিশোধ হিসেবে লাভলীর অনুসারীরাও মারুফের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়।

সংঘর্ষটি দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে ধারালো অস্ত্র ও হাতবোমার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি। পরে রাত ১১টার দিকে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুড়িয়ে দেওয়া মোটরসাইকেলগুলোর আগুন নেভায়।

সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিক্রিয়া

সংঘর্ষের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মহিলা দল নেত্রী লাভলী খাতুন এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, বিএনপিরই একটি গ্রুপ তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, সাব্বিরকে তুলে দেওয়ার আগে তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এর জেরেই তার বাড়িতে হামলা হয়।

এ বিষয়ে মারুফ হোসেন জীবনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে তার পক্ষ থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, সংঘর্ষের কারণ আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক নন, বরং এটি লাভলীর পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের ফল।

প্রশাসনের পদক্ষেপ

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতেই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং যৌথবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।