জাতিসংঘের প্রতিবেদন কি শেখ হাসিনা সরকারের চূড়ান্ত রায়?

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়

টুইট‌ ডেস্ক: বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের বিক্ষোভ দমনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের মতে, ওই সময়ের সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে প্রায় ১৮০ শিশু ছিল।

বুধবার (৫ মার্চ) জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে উপস্থাপিত হয় প্রতিবেদটি।

হেমলেট পরে লাঠিসোঁটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ । ছবি : সংগৃহীত

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসন ছাত্র আন্দোলনকে ‘নৃশংসভাবে দমন’ করেছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ। এতে নির্বিচারে হত্যা, ইচ্ছামতো গ্রেফতার, আটক ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল হতে পারে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে জাতিসংঘের মতে, বিচার বিভাগীয় সংস্কার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

জাতিসংঘের সুপারিশ

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশ করা হয়েছে-

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত

সহিংসতার ঘটনায় নিহত ও আহতদের বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার।

সংখ্যালঘু সুরক্ষা

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা

সাংবাদিক ও মতপ্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

ভবিষ্যৎ করণীয়

বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এতে কেবল দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি সুদৃঢ় হবে না, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন

জাতিসংঘ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বুধবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় জেনেভা থেকে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সংস্কারের ফলাফল এবং সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন যে, তাদের সাম্প্রতিক তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন বাংলাদেশে সত্য বলা, জবাবদিহিতা ও মানবাধিকার সংস্কারে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, ফৌজদারি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার তদন্ত করা জরুরি।

তুর্ক উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল, যেখানে তৎকালীন সরকার ছাত্র আন্দোলন দমন করেছিল। তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করছে এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদন এই যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।