ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বৈঠকে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি
টুইট ডেস্ক: দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৫৫তম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত-সংক্রান্ত ইস্যুতে আলোচনা হলেও কোনো চূড়ান্ত সমাধান পাওয়া যায়নি। চার দিনব্যাপী এই বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই তাদের নিজ নিজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আলোচনার রাস্তা খোলা রেখেছে।
১. সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে মতবিরোধ
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করছে, যা আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের শামিল। বিশেষ করে মালদার সবদলপুর গ্রামে এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপিত হয়।
২. সীমান্ত হত্যা ও নিরাপত্তা ইস্যু
সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিজিবি পক্ষ থেকে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের ওপর গুলিবর্ষণ বন্ধের দাবি জানানো হয়। তবে বিএসএফ দাবি করে, সীমান্তে মাদক পাচার ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতেই তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিএসএফ মহাপরিচালক জানান, সীমান্তে তাদের সদস্যরাও হামলার শিকার হচ্ছেন এবং আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হন।
৩. অনুপ্রবেশ ও পাচার নিয়ে ভারতের উদ্বেগ
ভারত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং মাদক ও অস্ত্র পাচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএসএফ দাবি করেছে, সীমান্তে সশস্ত্র চোরাচালানকারী ও অপরাধীদের কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। তারা বিজিবিকে ভারত-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়।
৪. যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা
সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া হয়। বিজিবি পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী চারটি খালের পানি শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা ভারতের পক্ষ থেকেও সমর্থিত হয়। এছাড়া, কুশিয়ারা নদীর সাথে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনের শেষে দুই বাহিনীর প্রধানরা যৌথভাবে জানান, আলোচনায় অনেক বিষয় উঠে এসেছে এবং ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও আলোচনা চলবে। তবে সীমান্ত হত্যা, কাঁটাতার স্থাপন, অনুপ্রবেশ ও পাচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো হয়নি। উভয় পক্ষ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই সীমান্ত সম্মেলন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর আলোচনা ও পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দিল্লির বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, মূল ইস্যুগুলোর মীমাংসা হয়নি। সীমান্ত নিরাপত্তা, অনুপ্রবেশ, পাচার এবং কাঁটাতার স্থাপন নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে উভয় দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন, যাতে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের কার্যকর উপায় খোঁজা যায়।