কাশেম শহীদ: ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবি
ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুরসহ দেশের প্রধান শহরে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু।
টুইট ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের গাজীপুরের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর চালিত নির্মম হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় আহত কাশেম খান হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় মৃত্যু বরণ করেন।
এই ঘটনার পর, কাশেমের হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি তুলে সারা দেশে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভ-মিছিল শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে ও সাড়ে ১১টায় গাছা থানার বোর্ডবাজারের আল-হেরা সিএনজি পাম্প স্টেশন মাঠে পৃথক পৃথক জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে কাশেম খানকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে, সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। শিক্ষার্থীদের জানানো হয় যে, কেউ লুটপাট করছে। লুটতরাজ ঠেকানোর লক্ষ্যে বাড়িতে প্রবেশের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রদের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে হামলা চালায়। মাইকসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্রদের আটক করে কুপিয়ে আক্রমণ করা হয়। এর ফলে, গাছা থানার সাইন বোর্ড কামারজুরি এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে শুভ শাহরিয়া (১৬), শরীফপুর এলাকার মেহের আলীর ছেলে ইয়াকুব (২৪), টঙ্গী পূর্ব থানার মধুমিতা রোড এলাকার গণেশ ঘোষের ছেলে সৌরভ (২২), সদর থানার জোড়পুকুর এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে হাসান (২২) ও অপর দুইজন গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গুরুতর আহতদের মধ্যে মো. কাশেম, যার মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ধরা পড়ে, হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন বুধবার বিকেল ৩টায় মৃত্যুবরণ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল জানান, “ছয় মাস পরেও শহীদের মিছিল থামেনি। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছি, এতদিনেও ফ্যাসিবাদের কাউকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। যতদিন বিপ্লবীরা বেঁচে থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগের কবর না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হবো না।”
গাজীপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব মহসিনও জানান, “গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে আমাদের এলাকায় এই নির্মম হামলার মাধ্যমে অনেকেই গুরুতর আহত হন, যার মধ্যে কাশেমের মৃত্যুকে আমরা ক্ষমা করতে পারছি না।”
কুমিল্লা মহানগরীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, “৫ আগস্টের পরও আমরা পুরোপুরি স্বাধীনতা লাভ করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্তচোষা ইতিহাস। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিলেন এবং শেখ হাসিনা গত ১৭ বছরে শত শত লাশ হত্যা ও গুম করেছেন। আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে, আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, “গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত কাশেম শহীদ হয়ে গেছেন। প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ আমার এই ভাই। ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।”
উল্লেখ্য, কাশেমের বাড়ি গাজীপুর জেলার গাছা থানার ভোটবাজার, দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকায় অবস্থিত। তিনি ওই এলাকার মৃত হাজী জামালের ছেলে। মা-বাবার অবর্তমানে কাশেম তাঁর সৎ মা ও ফুফুর কাছে বড় হয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে লুটপাটের খবর পাওয়ার পর কিছু শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। তবে, ঘটনাস্থলে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা ছাত্রদের উপর নির্মম হামলার প্রেক্ষিতে ২০ জনকে গুরুতর জখম করা হয়। এই হামলার মধ্যে কাশেমসহ আরও পাঁচজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
শহীদ কাশেমের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ঢাকা সহ সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল জোরদার হয়েছে। ছাত্ররা জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবী করছে।
সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিস্তৃত তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।