পারিশ্রমিক ইস্যুতে বিতর্কের কেন্দ্রে দুর্বার রাজশাহী

  • ভঙ্গ করা হলো প্রতিশ্রুতি
  • ক্রিকেটারদের প্রতি অবিচার নাকি প্রশাসনিক ব্যর্থতা?

টুইট ডেস্ক: বিপিএল জুড়ে পারিশ্রমিক সংক্রান্ত বিতর্কে ছিল দুর্বার রাজশাহী। দলটি টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলেও পারিশ্রমিক বিতর্কের ইতি টানেনি।

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করেছেন দলটির মালিক শফিকুর রহমান।

অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়ার পর তিনি মুচলেকা দেন যে, ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্রিকেটার ও দলের সংশ্লিষ্ট সবার বকেয়া পরিশোধ করবেন। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও কেউই বাকি ৫০% পারিশ্রমিক পাননি, দলটির একাধিক সূত্র আমার দেশ কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া মুচলেকা অনুযায়ী –

৩ ফেব্রুয়ারি ২৫% পরিশোধ হ‌লেও ৭ ও ১০ ফেব্রুয়ারি আরও ৫০% পরিশোধের কথা ছিল । কিন্তু বাস্তবে ৩ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৫% পরিশোধের পর আর কোনো অর্থ দেননি শফিকুর রহমান। ফলে এখনো ৫০% বকেয়া রয়েছে, যা বুঝে পেতে ক্রিকেটারদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

চেক বাউন্স, অনুশীলন ও ম্যাচ বয়কট
পারিশ্রমিক পেতে চট্টগ্রাম পর্বে অনুশীলন বয়কট করেন ক্রিকেটাররা। এর আগে তাদের দেওয়া চেক বাউন্স হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। পরে বিসিবি সভাপতির উপস্থিতিতে নগদ অর্থে ২৫% পরিশোধ করা হয়।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম পর্বেই আরও ২৫% পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা পূরণ করা হয়নি। ঢাকায় ফিরে ক্রিকেটাররা ম্যাচ বয়কটের হুমকি দিলে পুনরায় চেক প্রদান করা হয়। দেশি ক্রিকেটারদের মাঠে নামানো সম্ভব হলেও বিদেশিরা রাজি হননি। পরে দেওয়া দ্বিতীয় কিস্তির চেকও বাউন্স হয়।

বিদেশি খেলোয়াড়দের অপেক্ষা ও বিসিবির নিরবতা

৩ ফেব্রুয়ারি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে ১৪ জন ক্রিকেটারকে ২৫% পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এরপরই ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলে শফিকুর রহমান ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তিনি সেই মুচলেকার শর্ত ভঙ্গ করেছেন।

এদিকে, এক বিদেশি ক্রিকেটারের এজেন্ট জানিয়েছেন, মালিক শফিকুর রহমান আরও ১০ দিন সময় চেয়েছেন।

অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মুচলেকা দেওয়ার পরও সময়মতো পারিশ্রমিক পরিশোধ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু সময়সীমা পার হলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে জানা গেছে, বিসিবি ৮ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায়।

দুর্বার রাজশাহীর পারিশ্রমিক ইস্যু আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

এবার মুচলেকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফের বিতর্কের জন্ম দিলেন শফিকুর রহমান।

ক্রিকেটারদের প্রতি অবিচার নাকি প্রশাসনিক ব্যর্থতা?

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) একসময় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ছিল। কিন্তু বছরের পর বছর নানা বিতর্ক, আর্থিক অনিয়ম এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দায়িত্বহীনতার কারণে লিগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুর্বার রাজশাহীর পারিশ্রমিক সংক্রান্ত ইস্যু এই সমস্যারই আরেকটি উদাহরণ।

প্রশ্ন হলো, একটি দল কেন বিসিবির অনুমতি নিয়ে খেলোয়াড়দের চুক্তিবদ্ধ করল, অথচ পরবর্তী সময়ে তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক দিতে ব্যর্থ হলো? যদি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এবং বিসিবি যথাযথভাবে মনিটরিং করত, তাহলে কি এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতো?

শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় দেওয়া মুচলেকা অনুযায়ী পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে কেন এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? বিষয়টি বিসিবি এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ব্যর্থতাকে সামনে এনে দেয়।

বিদেশি খেলোয়াড়দের পাওনা না দিয়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইমেজের জন্যও হুমকি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন ঘটনা বাংলাদেশকে একটি অবিশ্বাসযোগ্য লিগের তালিকায় ফেলে দিতে পারে।

এটা স্পষ্ট যে, শফিকুর রহমানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং বিসিবির নিরবতা দুই পক্ষেরই ব্যর্থতা তুলে ধরে। বিপিএল পরিচালনায় আরও স্বচ্ছতা ও কঠোর মনিটরিং না আনলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়দের আস্থা হারাবে এই টুর্নামেন্ট।