সাগর-রুনি খু(নের) ১৩ বছর, সরকার পরিকল্পিতভাবে আলামত নষ্ট করে অভিযোগ আইনজীবীর
টুইট ডেস্ক: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর আজ। ২০১২ সালেরর ১১ ফেব্রুয়ারি দিনের আলো ফোটে এক নৃশংসতার খবর নিয়ে। সাংবাদিক সাগর-রুনি খুন হয়েছেন রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাসায়।
এই হত্যাকাণ্ডের পর থানা পুলিশ, ডিবি ঘুরে তদন্ত যায় র্যাবের কাছে। মাঝের তের বছরে কিছু আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো ছাড়া বলার মত অগ্রগতি নেই এ হত্যা মামলায়। এ সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় পিছিয়েছে ১১৪ বার। যেটিও নিকট অতীতে বিরল।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। আর মেহেরুন রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এই দম্পতি খুনের ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে। খুনের দুইদিন পর তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহামুদ খন্দকার বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তবে এরপর আওয়ামী শাসনামলে আর অগ্রগতি হয়নি এই হত্যা মামলার।
গত আগস্টে পট পরিবর্তনের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত আইজিপিকে প্রধান করে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গেল ৪ নভেম্বর তদন্তভার গ্রহনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৬২ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে ট্রাস্কফোর্স।
এ মামলায় গ্রেফতার আটজনের মধ্যে দুজন আছেন জামিনে। এ নিয়ে অবশ্য আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি টাস্কফোর্স সদস্যরা। তবে বিচারের আশায় নতুন করে বুক বেধেছেন স্বজনরা।
এ মামলায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে আলামত নষ্ট ও বিচারকাজ বিলম্বিত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদীর আইনজীবী শিশির মনির। তিনি বলেন, অপরাধীদের বাঁচাতে আওয়ামী লীগ সরকার এ কাজ করেছিল।
এই দম্পতি যখন নিহত হন তখন রেখে গিয়েছিল ছোট্ট ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘকে। এখন তার বয়স আঠারো। তিনি এখন স্বপ্ন দেখেন তার বাবা-মার খুনিদের সাজা হবে। মেঘ বলেন, আগে তো কোনো কাজ হয়নি। এখন কিছুটা কাজ হচ্ছে। আশা করছি বিচার হবে। এর পরক্ষণেই তিনি বলেন, আর না হলেও সমস্যা নেই, আগেও দেখেছি কিছুই (বিচার) হয়নি। বিচার না হলে আগের সরকারের মতই ধরে নেবো।
নতুন সরকার দ্রুত এই মামলার বিচার কাজ শেষ করবেন এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন এমনই প্রত্যাশা স্বজনদের। এ বিষয়ে মামলার বাদী ও সাংবাদিক রুনির ভাই নওশের রোমান বলেন, তৎকালীন সরকার ইচ্ছে করেই মামলাটির অগ্রগতি হতে দেয়নি। এতে আমরা নিশ্চিত সেখানে সরকারের প্রভাবশালীরা জড়িত। সেজন্য তারা তদন্তের কাজ চলতে দেয়নি। এখন দেশে ওই সরকার নেই, এখানে নতুন সরকারের স্বার্থ আছে বলেও মনে করি না। তাই আশাবাদী, এখন ইতিবাচক বিচার পাবো।
সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, আর কত রাত জাগবো? আর কত অপেক্ষা করবো? এই সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পারবে। দ্রুতই এই খুনের বিচার পাবেন এমন আশায় বুক বেধেছেন তিনি।