পিরোজপুরে ১৭ প্রকল্পে ১৬শ কোটি টাকা লোপাট: দুর্নীতি ফাঁস
টুইট ডেস্ক: পিরোজপুরের ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায়।
সাবেক মূখ্য সচিব, সাবেক মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক দুজন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে এই টাকা লোপাটে জড়িত বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তদ্ব্যতীত, এই অনিয়মে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের ১১ জন প্রকৌশলীও সহায়তায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মোট ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়কের অবকাঠামো, ব্রিজ নির্মাণসহ নানা বড়ো প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে।
সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ তদন্তে প্রমাণিত হয়, প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে প্রায় ১৬৪৭ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
১৭টি প্রকল্পের মোট স্কিম সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮১০টি, যার মধ্যে ৩৭০টি স্কিমের নথি গোপন করা হয়েছে। এছাড়া, চুক্তিমূল্যের তুলনায় অতিরিক্ত বিল উত্তোলনের ঘটনা, স্কিমের কাজ শতভাগ সম্পন্ন না করেও বিল গ্রহণ, এক প্রকল্প দেখিয়ে দ্বৈত বা বহুগুণে বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও চুক্তিগত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে অন্য ঠিকাদারকে বিল প্রদান করে লেনদেন সম্পন্ন করা হয়েছে।
এক উপদেষ্টা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে এই প্রকল্পগুলোর অনুমোদন নিয়ে দুর্নীতির প্রক্রিয়া সহজ করে তুলেছিলেন।
তদন্তে এছাড়াও নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের জড়িত থাকার প্রাথমিক সূত্র পাওয়া গেছে;
-পিরোজপুর ১ আসন: সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম
– পিরোজপুর ২ আসন: সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ
– উপজেলা পর্যায়: সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম এবং সাবেক নজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরে আলম শাহীন
– প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা: সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, দুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টা জানান, দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আইনানুগ ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।
পিরোজপুরের ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পে প্রকাশিত দুর্নীতির এই প্রমাণ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে গভীর অনিয়ম ও প্রশাসনিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।
তদন্ত ও মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও, এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে লোপাট অর্থের ব্যাপক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে আশা করা হচ্ছে।