পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে পাঁচশ প্রতারণা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পেশায় অটো চালক হলেও মোবাইলে পুলিশ সদস্যদের পরিচয় দেন এসপি কিংবা এডিশনাল এসপি হিসেবে। এ পরিচয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন তিনি। পরে তাদের ফোন করে পাশের বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টদের কাছে পাঠিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন টাকা।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা থেকে শুক্রবার সাগর ওরফে রিমন (২৩) নামে এই প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সাগর গত সাড়ে তিন বছরে ৪৮৩ জন পুলিশ সদস্যকে ফোন করে এ ধরনের প্রতারণা করেছে বলে পুলিশের ভাষ্য।

গত ১৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানা এলাকায় এক পুলিশ সার্জেন্টকে মোবাইলে ফোন করে নিজেকে এডিশনাল এসপি মামুন পরিচয় দেন গ্রেপ্তার সাগর। পরে তাকে ওই সার্জেন্টকে পাশ্ববর্তী বিকাশ এজেন্টের দোকানে যাবার নির্দেশ দেন। ওই সার্জেন্ট দোকানে গেলে তার মোবাইলের মাধ্যমে এজেন্টের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে কথা বলে সাগর হাতিয়ে নেন ৫০ হাজার টাকা।

নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার লিয়াকত আলী খান বলেন, সাগর সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সদস্য। এ চক্রে আরও কয়েক জন সদস্য আছে। যাদের কাজ প্রতারণা ও মাদক বেচাকেনা। এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা ও নওগাঁর বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা আছে।

“যার কারণে এখন উত্তরবঙ্গের ওই সব এলাকায় প্রতারণা না করে সাগর প্রতারণার জন্য চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত আলী জানান, স্কুলের গণ্ডি পার না হওয়া সাগর পেশায় অটোচালক। গত সাড়ে তিন বছর ধরে তিনি একটি চক্রের সাথে মিলে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছেন। এভাবে করে গত সাড়ে তিন বছরে সে ৪৮৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের সাথে কথা বলে প্রতারণা করেছে প্রাথমিকভাবে তারা প্রমাণ পেয়েছেন।

গত ১৯ নভেম্বর নগরীর সদরঘাট থানায় কদমতলী এলাকায় মিনহাজ উদ্দিন নামে এক বিকাশ এজেন্ট এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়। এ ঘটনায় তিনি গত ২৭ নভেম্বর একটি মামলা করেন সদরঘাট থানায়।

মিনহাজ এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় কদমতলী ট্রাফিক বক্সে দায়িত্বরত এক সার্জেন্ট টেলিফোনে কথা বলতে বলতে দোকানে গিয়ে তার নাম সুকুমার কি না জানতে চান। না বলার পর ওই সার্জেন্ট টেলিফোনে কথা বলতে বলতে আরও কয়েকটি বিকাশ এজেন্টের কাছে যান।

পুনরায় তার দোকানের সামনে এসে ওই পুলিশ সার্জেন্ট তার মোবাইলটি দিয়ে কথা বলতে বলেন। এসময় অপরপ্রান্ত থেকে এক লোক নিজেকে এডিশনাল এসপি মামুন পরিচয় দিয়ে তার ব্যক্তিগত নম্বর জানতে চান। নম্বর বলার পর টেলিফোনটি সার্জেন্টকে দিয়ে দিতে বলেন। তখন ওই সার্জেন্ট সেখান থেকে চলে যায়।

ভুক্তভোগী মিনহাজ আরও উল্লেখ করেন, পরে মোবাইলের অপর প্রান্তের ওই ব্যক্তি তাকে ফোন করে। তার দেয়া কয়েকটি নম্বরে চার দফায় ৫১ হাজার ৫০২ টাকা ক্যাশ আউট করতে বলেন। রাত ৮টার দিকে তিনি নিজে এসে টাকা পরিশোধের কথা বলেন।

পরে আর ফোন না ধরায় তিনি পুলিশ বক্সে গিয়ে তার কাছে আসা সার্জেন্টকে গিয়ে ঘটনা খুলে বলেন এবং বুঝতে পারেন, তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, পুলিশের মাধ্যমে এ প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে তারা বিষয়টি তদন্ত শুরু করেন। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করে তাদের একটি দল পাঠিয়ে সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার সকালে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। সূত্র- বিডিনিউজ