কুষ্টিয়ায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হ‌লো সা‌বেক এমপি হানিফের বাড়ি

টুইট ডেস্ক: কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির অবশিষ্ট অংশ এবার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার পর কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। শতাধিক ছাত্র-জনতা বাড়িটির সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে “স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও”। এরপর একটি বুলডোজার দিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক, বাউন্ডারি ওয়াল, ও ভেতরের কিছু অংশ ভাঙচুর করা হয়।

বিক্ষোভের শুরু থেকে উত্তেজনা ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে। বিক্ষোভকারীরা রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সামনে সমবেত হয়। সেখানে থেকে একটি বিশাল মিছিল বেরিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পিটিআই রোডের দিকে অগ্রসর হয়। পাশাপাশি শহরের উপজেলা মোড় থেকে একটি মশাল মিছিলও বের করা হয়, যা এসে মূল বিক্ষোভে যোগ দেয়।

বিক্ষোভকারীরা রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এরপর সেখান থেকে আরও একটি মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের কদমতলা এলাকার বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সেখানেও ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়। তবে বাড়ির ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে রাস্তার উপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তারা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই পুরো ঘটনার সময় উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। বিক্ষোভ চলাকালে আশপাশের এলাকাগুলোতে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছিল।

উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। সেই ঘটনার পর থেকে হানিফের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘অঘোষিত সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত হানিফের পতনের পর তার বাড়ি বারবার ছাত্র-জনতার ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

এক বিক্ষোভকারী বলেন, “স্বৈরাচারের প্রতীক এই বাড়ি আমাদের কাছে অন্যায়ের স্মৃতি বহন করে। আমরা কোনোভাবেই এটি টিকে থাকতে দেব না।”

অন্য এক ছাত্রনেতা বলেন, “যে বাড়ি সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘামে নির্মিত, সেটি স্বৈরাচারের আশ্রয় হতে পারে না। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।”

এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানামুখী প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ কেউ ছাত্র-জনতার সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন, আবার অনেকে আইনশৃঙ্খলার শূন্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ঘটনাটি কুষ্টিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।