সীমান্তে বেড়া নির্মাণ: বিজিবি-কে চ্যালেঞ্জ মনে করেন ভারত
বিশ্ব ডেস্ক: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া নির্মাণ নিয়ে এক নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যা দুই দেশের মানুষের জীবন, সম্পর্ক এবং অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এই বেড়া নির্মাণের ফলে বৈধ এবং অবৈধ উভয় ধরনের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে সীমান্ত-নির্ভর অর্থনীতির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৮০০ কিমি অংশে এখনো নেই তারের বেড়া, চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে বিজিবি’র আপত্তি: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৪,০৯৬.৭ কিলোমিটার অংশের মধ্যে প্রায় ৮৬৪.৪৮২ কিমি এখনো সুরক্ষিত বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়নি। এর মধ্যে ১৭৪.৫১৪ কিমি অঞ্চলকে “অসাধ্য ফাঁক” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক কারণে বেড়া নির্মাণ সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) লোকসভায় লিখিত জবাবে এ তথ্য জানান ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৩,২৩২.২১৮ কিমি সীমান্ত বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
সীমান্ত-নির্ভর বাণিজ্য এই অঞ্চলের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর মাধ্যমে অনেক পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তবে, বেড়া নির্মাণের ফলে বৈধ বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা সীমান্ত এলাকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এমনকি, সীমান্তে বেড়া নির্মাণের প্রক্রিয়া সাধারণ জনগণের জন্য অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যা অবশ্যই প্রতিরোধ করা উচিত।
ভারত এভাবে যুক্তি দিয়েছে যে, সীমান্তে বেড়া নির্মাণ চোরাচালান, সন্ত্রাসবাদ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে সহায়ক। কিন্তু, বেড়া নির্মাণের ফলে সাধারণ মানুষ যেন সমস্যায় না পড়ে এবং তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সেই বিষয়টিও সুনিশ্চিত করতে হবে।
সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে সীমান্ত হত্যা, গুলি চালানো বা নির্যাতনের মতো ঘটনার উদ্ভব হতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই ধরনের ঘটনার ফলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, যা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। সীমান্ত সুরক্ষায় মানবাধিকার লঙ্ঘন যেন না হয়, তা নিশ্চিত করা উচিত।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্ক নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদান ও পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পানিবণ্টন এবং সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত বেড়া নির্মাণের মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কোনো অকারণ উত্তেজনা বা একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত দুই দেশের পারস্পরিক আস্থায় ফাটল ধরাতে পারে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যেসব আপত্তি জানাচ্ছে, তা শুধুমাত্র প্রশাসনিক বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সাথে সম্পর্কিত। তাই ভারতকে এই আপত্তিগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত এবং যৌথভাবে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
সীমান্ত বেড়া নির্মাণ কোনো একক দেশের স্বার্থে গৃহীত সিদ্ধান্ত হতে পারে না, বিশেষ করে যেখানে দুই দেশের মানুষের জীবন, সম্পর্ক এবং অর্থনীতি জড়িত।
সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে মানবিক, সামাজিক এবং কূটনৈতিক বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে বিবেচনা করা জরুরি। সীমান্ত সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত পারস্পরিক সমঝোতা, আস্থা এবং বন্ধুত্বের ভিত্তিতে, যা দুই দেশের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।