বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় যাদের নাম পেয়েছে এইচআরডব্লিউ

টুইট ডেস্ক: গুমের ঘটনায় বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য তুলে ধরেছে।

‘আফটার দ্য মনসুন রেভ্যুলিউশন : আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ। এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে সাড়ে তিন হাজারের বেশি জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটেছে, যা একটি জাতীয় কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতীয় কমিশনটি গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, জোর করে গুমের ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা ও তদারকির অধীনে কাজ করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তিনজন গুম হওয়া ব্যক্তিকে গোপন আটক কেন্দ্র থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই তিনজনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বছরের পর বছর ধরে আটক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছিল।

গুমের শিকার আইনজীবী মীর আহমাদ বিন কাসেম বলেন, “যে স্থানে আমাকে আটক রাখা হয়েছিল, সেটি ছিল এমনভাবে নকশা করা, যা বন্দিদের জন্য মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তৈরি করত।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্যাতনের ধরন ছিল শুধুমাত্র পদ্ধতিগত নয়, বরং এটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও প্রভাবিত। নির্যাতন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ প্রতিবেদনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-কে জোর করে গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে জানিয়েছে, সরকারের উচিত এই বাহিনীটি ভেঙে ফেলা।

র‍্যাবের প্রধান এ কে এম শহীদুর রহমান স্বীকার করেছেন যে, র‍্যাবের গোপন আটক কেন্দ্রগুলো সত্যিই ছিল এবং অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেই এই ইউনিট ভেঙে দেওয়া সম্ভব।

এইচআরডব্লিউ সুপারিশ করেছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন বেসামরিক তদারকি নিশ্চিত করা। যেমন,

– আটক কেন্দ্রগুলোতে অঘোষিত পরিদর্শন করার অধিকার প্রদান করা।
– বাহিনীর ক্ষমতার ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সীমাবদ্ধ রাখা, যাতে কোনো সদস্য আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে এইচআরডব্লিউ-এর এই প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক পরিসরে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

সরকার এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।